Thank you for trying Sticky AMP!!

মুশফিকের ক্রিকেটে ১৫ বছর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ ১৫ বছর পূর্তি মুশফিকুর রহিমের। ছবি: শামসুল হক

সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘আঠারো বছর বয়সে অহরহ, বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ বলা হয়ে থাকে, টিনএজারদের সবচেয়ে উদ্যমী বয়স ‘আঠারো’। কাউকে পরোয়া না করে টগবগিয়ে ছুটতে থাকে। আত্মতেজে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে।

ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের অভিষেকটা ২০০৫ সালে স্বপ্নের মতো স্বপ্ন দেখার বয়সেই হয়েছিল। যা আজ মুশফিককে পরিণত করেছে অন্যের স্বপ্ন বোনার আদর্শ হিসেবে।

বিশ্বের জনপ্রিয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকেই হয়তো বিভিন্ন স্টেডিয়ামের নাম বলে থাকবেন। তবে লর্ডসের নাম যে অধিকাংশ মানুষ বলবেন, এটাই অনুমেয়। কারণ, লর্ডসকে ‘ক্রিকেটের মক্কা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পাশাপাশি যদি প্রশ্ন করা হয়, ক্রিকেটের সৌন্দর্য খেলার কোন সংস্করণ? ক্রিকেটার, বিশ্লেষকসহ প্রত্যেকেই হয়তো টেস্টকেই বাছাই করতে চাইবেন। একজন ক্রিকেটারের অভিষেকটা যদি টেস্টেই হয় এবং তা–ও আবার লর্ডসে, নিশ্চয়ই তাঁকে ভাগ্যবান বললে ভুল হবে না। মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের ভাগ্যবান ক্রিকেটারদের তালিকার একজন। লর্ডসের ইতিহাসে মুশফিকের চেয়ে এত কম বয়সে এ পর্যন্ত কারও অভিষেক হয়নি।

২০০৫ সালের ২৬ মে, মাত্র ১৭ বছর ৩৫১ দিন বয়সে লর্ডসে অভিষেক হয় মুশফিকের। তারপর থেকে উইকেটের পেছনের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ব্যাটসম্যান হিসেবেও দলে অবদান রেখেছেন। ২০০৮ সালে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দল থেকে বাদও পড়েছেন। পরে গড়পড়তা ব্যাটসম্যান থেকে পরিশ্রমের বিনিময়ে দেশসেরা ব্যাটসম্যান হয়েছেন। চার নম্বরে বর্তমানে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। বছর কয়েক অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। উত্থান–পতনে বাংলাদেশ দলে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন, কাটাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজকের দিনে ক্যারিয়ারের ১৫ বছর পূর্ণ করেছেন মুশফিকুর রহিম।

পরিসংখ্যানে উজ্জ্বল মুশফিক

২০০৬ সালে ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক মুশফিকের। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০০ ওয়ানডেতে মুশফিকের ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ২৬। পরবর্তী ১১৮ ম্যাচ মিলিয়ে মোট ২১৮ ওয়ানডে খেলা মুশফিকের বর্তমান গড় ৩৭ ছুঁই ছুঁই। টেস্টে সংস্করণের শুরুর ম্যাচগুলোতেও বিবর্ণ ছিলেন বগুড়ার এই সন্তান। প্রথম ২০ টেস্টে ৩০ গড়ে রান করতে না পারা এই ব্যাটসম্যানের বর্তমান গড় ৩৭–এর কাছাকাছি। দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রথম ৯ বছরে উভয় ফরম্যাটে মুশফিকের সেঞ্চুরি মাত্র ৫টি এবং পরের ছয় বছরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৯টি। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি সংস্করণের আনকোরা মুশফিকের ৫টি অর্ধশতকের ৪টি-ই শেষ ছয় বছরে। পরিসংখ্যান বলে দেয়, কয়েক বছর ধরে কতটা ধারাবাহিক মুশফিকুর রহিম।

কিছুদিন আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম বলেছিলেন, দলের কাউকে যদি জুনিয়ররা অনুসরণ করতে চায়, তবে যেন মুশফিককে করে। কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ, আনুগত্য, একনিষ্ঠতা, দায়িত্বশীলতা সব মিলিয়ে মুশফিক দেশের ক্রিকেটের অনন্য প্যাকেজ। বিশ্বের একমাত্র উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির মালিক মুশফিকুর রহিম। ক্রিকেট ইতিহাসের ওয়ানডে সংস্করণে শীর্ষ ৫ উইকেটকিপারের ৬ হাজার রান এবং ২০০ ডিসমিসালের তালিকায় রয়েছে মুশির নাম। সর্বশেষ আইসিসির র‍্যাঙ্কিং তালিকার দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডের শীর্ষ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। পরিণত মুশফিক দলের ক্রান্তিলগ্নে হাল ধরেছেন। প্রতিপক্ষ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। দল থেকেও পেয়েছেন ‘ডিপেন্ডেবল তকমা’। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক মুশফিক নিশ্চয়ই এটা প্রমাণ করেন তিনি দলের কতটা নির্ভরশীলতার প্রতীক।

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানসংগ্রাহক শচীন টেন্ডুলকার। যাঁকে অধিকাংশ ক্রিকেটবোদ্ধা ‘লিটল মাস্টার’ বলে থাকেন। লম্বায় কিছুটা খর্বাকৃতির শচীন ২২ গজে বিশ্বের সব বাঘা বাঘা বোলারকে শাসিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৪ হাজার রানের মাইলফলক অর্জন করেছেন। শচীনের সঙ্গে মুশির তুলনা অসম্ভব বটে। তবে দুজনের যে একেবারে সাদৃশ্য নেই, তা–ও বলার সুযোগ নেই। শচীনের মতো মুশিও দলের খর্বাকৃতির ব্যাটসম্যান। ধারাভাষ্যকারেরা মুশিকে প্রায়শই ‘দ্য লিটল ম্যান’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। ক্যারিয়ারের সূচনাটা উভয়ই একজন সাধারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু করে দিনান্তে দলের রানমেশিন হিসেবে পরিণত হয়েছেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে সংস্করণে শচীনের গড় যথাক্রমে ৫৩ এবং ৪৪ ছাড়িয়ে। উভয়ই ফরম্যাটে মুশির গড় যথাক্রমে ৩৭–এর কাছাকাছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে শচীন বিদায় বললেও মুশফিক এখনো অব্যাহত আছেন। জাতীয় দলের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড় হিসেবে লম্বা সময় খেলতে চাইবেন। ক্যারিয়ারের শেষে উভয় সংস্করণে কমপক্ষে ৪০–এর এপরে গড় রাখার আশা ব্যক্ত করেছেন।

ক্যারিয়ারের ১৫ বছর ফুর্তিতে মুশফিক খুবই আনন্দিত, উল্লসিত। কয়েক দিন ধরে ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করছেন। ফেসবুকে ১৫ বছরের স্মরণীয় দিনগুলো নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন, ১৫ বছর পূর্ণের আমুদে আজ রাতে নিজের ভেরিফাইড পেজে লাইভে আসবেন। ক্রিকেটপ্রেমীদের বিশেষ কিছু জানাবেন। নিশ্চয়ই ভক্তরা আনন্দের দিনে বিশেষ ঘোষণা শুনতে অপেক্ষা করবেন। যেমনটা করেন খেলার মাঠে, প্রতিপক্ষ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার সময়।

এই বাংলায় মুশফিকেরা আসুক বারবার, পরিশ্রমের ফল তরুণেরা দেখুক আবার। তাতে দেশের ক্রিকেটের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সাফল্যের পথ খুঁজে পাবে।

* লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়