Thank you for trying Sticky AMP!!

ম্যালেরিয়ার জীবাণু সমতলে নিয়ে আসছে মানুষ

>

• পাঁচ জেলায় মানুষের চলাচল ও মুঠোফোনের তথ্য বিশ্লেষণ
• ম্যালেরিয়ার বিস্তারের সঙ্গে মানুষের চলাচলের সম্পর্ক আছে
• পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চলাচলের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ছড়াচ্ছে

ম্যালেরিয়ার বিস্তারের সঙ্গে মানুষের গতিবিধির সম্পর্ক আছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার—এই পাঁচ জেলায় মানুষের চলাচল ও মুঠোফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা এই দাবি করছেন।

গবেষকেরা বলছেন, নতুন এই তথ্য ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় কাজে লাগবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাঁরা যান, তাঁদের সচেতন করতে হবে। আবার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যাঁরা ফিরবেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচিসহ বেশ কিছু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ জন গবেষক এই গবেষণা করেছেন। এই দলে ব্র্যাক ও মুঠোফোন কোম্পানি টেলিনরের গবেষকেরাও ছিলেন। ‘ম্যালেরিয়ার জিন ও মানুষের গতিবিধির উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার মানচিত্রায়ণ’ শিরোনামে তাঁদের এই গবেষণা গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিজ্ঞান গবেষণা সাময়িকী ই-লাইফ–এ প্রকাশিত হয়।

রোগবিস্তারে মানুষের গতিবিধি পরিমাপের ক্ষেত্রে এই গবেষণা নতুন ধরনের প্রচেষ্টা। মানুষের চলাফেরার মাধ্যমে ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটছে কি না, তা দেখাই ছিল এই গবেষণার উদ্দেশ্য। আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি নির্ণয় ও তার সমাধানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে সহায়তা করা।

ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যালেরিয়ার বিস্তারের সঙ্গে মানুষের চলাচলের সম্পর্ক আছে। সমতলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কম। কিন্তু সমতলের মানুষ পাহাড়ে গিয়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু সমতলে আনতে পারে।’ তিনি জানান, দেশে কোনো ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পার্বত্য তিন জেলা এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৫৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৯০ জন ম্যালেরিয়া রোগীর রক্ত পরীক্ষার তথ্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাজ করা হয় জানুয়ারি ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত । এ ছাড়া তাদের অবস্থান ও অবস্থান পরিবর্তনের তথ্য জানতে মুঠোফোনের উপাত্তও গবেষণায় ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশের গবেষকেরা জানিয়েছেন, কাঠ ও বাঁশ কাটতে সমতল থেকে অনেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে যায়। সেখানে এরা ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহিত মশার দ্বারা আক্রান্ত হয়। তারপর সমতলে নিজের বাড়ি ফেরে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে যাঁরা চাকরির কারণে অবস্থান করেন, তাঁরাও একইভাবে জীবাণু সমতলে আনেন।

অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, ‘চকরিয়ার মানুষ লামা ও আলীকদম যায়, রামুর মানুষ যায় নাইক্ষ্যংছড়িতে। চকরিয়া ও রামুতে ম্যালেরিয়ার জীবাণু আসে মানুষের মাধ্যমে।’

সরকারের জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা প্রথম আলোকে বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে কোন রোগী স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত আর কোন রোগী বাইরে থেকে জীবাণু বয়ে এনেছে। এ ব্যাপারে এখন নজরদারি বাড়াতে হবে।