Thank you for trying Sticky AMP!!

যাঁদের হাত পাততে হয়নি, তাঁরাই এখন পথে

পথে হাত পাতা নারীদের অনেকেই আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। কাজ হারিয়ে এখন তাঁরা পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। ছবি: মানসুরা হোসাইন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে নিম্ন আয়, বিশেষ করে নারী গৃহশ্রমিকদের (ছুটা বুয়া বা অস্থায়ী গৃহকর্মী) ভোগান্তি আরও বাড়বে। সরকারের সাধারণ ছুটি শেষে এবং বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন শিথিল হওয়ার পর রিকশাচালক থেকে শুরু করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু এই গৃহকর্মীরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় নিয়োগকর্তা নিজে এবং ফ্ল্যাট মালিক সমিতি বা অন্যদের সিদ্ধান্তে বেশির ভাগ অস্থায়ী গৃহকর্মীকে বাসায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। 

ফলে রাজধানীর পথেঘাটে সাহায্যপ্রার্থী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এ ধরনের একাধিক নারী বলেন, আগে তাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের বিস্তারে তাঁদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। অনেকে প্রথম মাসের বেতন পান, পরে আর পাননি। এই নারীদের বক্তব্য, আগে পরিবারে অভাব থাকলেও মানুষের কাছে হাত পাততে হয়নি, কিন্তু এখন পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। 

করোনাকালে দেশের এ পরিস্থিতিতে আজ ১৬ জুন মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস। তবে কোথাও দিবসটি ঘটা করে পালিত
হচ্ছে না। 

করোনার আগেও গৃহকর্মীদের অবস্থা নাজুক ছিল। তাঁরা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’–এর আওতাবহির্ভূত রাখায় তাঁরা মানবিক অধিকার, শোভন কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। তা ছাড়া নিয়োগকর্তার বাসায় যে গৃহকর্মীরা থাকেন, তাঁদের কারও কারও শারীরিক-মানসিক হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। 

গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় সরকার ২০১৫ সালে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫’ নীতিমালা করলেও তার বাস্তবায়ন নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই নীতির আলোকে একটি আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। 

আইএলও সনদ-১৮৯-এর মূল বিষয় হচ্ছে, গৃহশ্রমিকের মানবাধিকারের কার্যকর সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া। এই সনদে এখনো অনুসমর্থন দেয়নি বাংলাদেশ। 

>অনিশ্চয়তার মধ্যে আজ নীরবে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস
অস্থায়ী গৃহকর্মীদের অনেকে প্রথম মাসের পর বেতন পাননি
আইএলওর গৃহশ্রমিকের মানবাধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর দেয়নি বাংলাদেশ
কর্মহীন গৃহকর্মী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাচ্ছেন কেউ কেউ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে গৃহস্থালি কাজে জড়িত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এঁদের ৯০ শতাংশ নারী।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) যৌথভাবে দরিদ্র মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ করেছে। গত ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত টেলিফোনে এ জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেন ৫ হাজার ৪৭১ জন। এতে বলা হয়েছে, গৃহকর্মীদের ৫৭ শতাংশেরই কোনো কাজ নেই। এই গৃহকর্মীদের ৭৬ শতাংশ আয় কমেছে। ফলে নিম্ন আয়ের অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্তদের পরিবারের যে ভোগান্তি, একই ভোগান্তি হচ্ছে গৃহকর্মী ও তার পরিবারের। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংযোগ বাংলাদেশ একসময়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখন মাস্ক তৈরির কাজ করাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্ন আয়ের অন্য পেশার শ্রমিকেরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে গৃহকর্মীদের বেলায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে বলেই মনে হচ্ছে। তাঁদের অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে। 

গৃহকর্মীদের পাশে থাকার উদ্যোগ

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সানিমা ওয়াহিদ ১৭ মার্চ থেকে ছুটা বুয়াকে বাসায় আসতে নিষেধ করেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে ছুটা বুয়াকে বেতন দিচ্ছেন বলে জানালেন। 

সানিমা ওয়াহিদ বলেন, ‘অন্য মানুষকে সহায়তা করছি, তাই ছুটা গৃহকর্মীর বেতন দেওয়া বন্ধ করিনি। তবে গৃহকর্মী কাজ না করে বেতন নিতে নিজেই লজ্জা পান। কিন্তু কোনো উপায় নেই।’ রাজধানীর অনেক পরিবারই ছুটা গৃহকর্মীর বেতন দিয়ে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংযোগ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সাদিয়া নাসরিন জানালেন, কর্মহীন গৃহকর্মী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁরা মাস্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ৫০ জন নারী এ কাজ করছেন। দৈনিক মজুরির পাশাপাশি মাস্ক বিক্রির লাভের একটি অংশও পাচ্ছেন এই নারীরা। 

অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গৃহকর্মী না থাকায় পরিবারের সব কাজ এখন নিজেদেরই করতে হচ্ছে। ফলে করোনাকালে এই পেশার জন্য কতটুকু গুরুত্ব, তা অনুধাবন করা সম্ভব হচ্ছে। এই পেশার স্বীকৃতিতে এই উপলব্ধিটা সহায়ক হবে।