Thank you for trying Sticky AMP!!

যুক্তরাষ্ট্রে পাননি তাই আশ্রয়ের জন্য কানাডায় সিনহা

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রথম আলাে ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত না হওয়ায়, গত ৪ঠা জুলাই তিনি তাঁর স্ত্রীসহ স্থল সীমান্ত দিয়ে কানাডায় ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

২০১৭ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত একটি মামলার আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

'এ ব্রোকেন ড্রিম' নামে তার লেখা একটি বইয়ে তিনি সে সময়কার ঘটনাবলি বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন।

কেন তিনি কানাডায় আশ্রয় চাইলেন?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রে এসেই কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমি রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়নি। এই চিন্তা আমার মাথায় আসেনি যে আমি অ্যাসাইলাম নেব। কিন্তু যখন আমার বইটা প্রকাশিত হচ্ছে, সেসময় সিডি লিকড আউট হয়ে গেল, তখনই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমার ওয়াইফকে প্রেশার ক্রিয়েট করল এটা প্রকাশ না করতে। তখনই আমি আমেরিকায় অ্যাসাইলাম চাইলাম।"

"আমেরিকাতে অ্যাসাইলাম চাওয়ার পরে, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, এবং আমি যেটা ক্লেইম করছি ইট ইজ সাপোর্টেড বাই ডকুমেন্টস। যথেষ্ট কারণ থাকে অ্যাসাইলাম অ্যাকসেপ্ট করার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমেরিকাতে তারা দুই তিন মাস কিছু করল না। এরপর এটা ডেফারড করল ইনডেফিনিট পিরিয়ডের জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য দেড় বছরেও তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।"

২০১৮ সালে তার আত্মজীবনীমূলক বই 'এ ব্রোকেন ড্রিম' প্রকাশের পর ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করে বিচারপতি সিনহা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে তার জীবনের ঝুঁকির কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

সেসময় বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি এই আশ্রয় চেয়েছেন। শুক্রবার তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, একপর্যায়ে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। "আমার যেহেতু কোনো স্ট্যাটাস ছিল না, আমার কোনো ইনস্যুরেন্স ছিল না। ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট কিছু বন্ধু বান্ধবরা করত, বই এর কিছু রয়্যালটি পেয়েছিলাম, এটা দিয়ে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করছিলাম। এই কারণে অনেক চিন্তাভাবনা করে কানাডায় আসার চিন্তাভাবনা করলাম।"

বিচারপতি সিনহা এর আগে জানিয়েছিলেন, তিনি দেশে ফিরবেন। সেই পরিকল্পনা কম এখন স্থগিত?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "শোনেন যখন প্রধান বিচারপতি ছিলাম, সে সময় যদি আমাকে গৃহবন্দী রাখা হয়, দেড় বছর পর আমাকে একটা মামলা দিয়ে দিল, তাদের (সরকার) ইনটেনশন যদি ভালো থাকত তাহলে তো এটা করত না।" টাকা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের জবাবে তিনি জানান, নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছেন।

কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য কি কারণ দেখিয়েছেন বিচারপতি সিনহা?

বিবিসির প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি সিনহা জানিয়েছেন, কোনো একটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার পর, কানাডায় আশ্রয় চাওয়া যায় না বলে দেশটির আইনে একটি বিধান রয়েছে।

"কিন্তু প্রধান বিচারপতি থাকাকালে যাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে সরকার, তাকে যদি রাজনৈতিক আশ্রয় না দেয়, তাহলে উন্নত দেশ যারা মানবাধিকারের কথা বলে তাদের ইয়ে থাকার কথা না।" কানাডায় কর্তৃপক্ষ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কাগজপত্র তৈরি থেকে সবকিছুতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

৪ঠা জুলাই তিনি স্থলপথে কানাডাতে প্রবেশ করেন।

"আমেরিকাতে আসার পরই আমি, আমার ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট ছিল, সেটা সারেন্ডার করলাম। এবং একজন লোক পাঠিয়ে কনসাল জেনারেলকে টেলিফোনে বললাম যে আমাকে একটা নরমাল পাসপোর্ট দেওয়া হোক।

কনসাল জেনারেল আমাকে বললেন যে, স্যার আমি ঢাকার অনুমতি নিয়ে আপনাকে দিয়ে দেব। এরপর বিচারপতি সিনহার পাসপোর্টটি নেয় দূতাবাস। প্রায় ছয় মাস পরে আমি জানতে চাইলাম আমার পাসপোর্টটা কী হলো। তিনি বললেন, স্যার আমাদের ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগ আসে নাই। ঢাকা থেকে আমেরিকাতে দেড় বছরেও ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগ আসে নাই। আমার পাসপোর্ট আর আসা হলো না। আমার ভিসা যদিও ছিল, কিন্তু ওটা তো পাসপোর্টে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এয়ারপোর্টে গেলে তো আমাকে ওখানে আটকাতো। আমি কোনো অলটারনেটিভ না দেখে চিন্তা করলাম বর্ডার দিয়ে পার হয়ে যাই। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের সরকার একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির 'হিউমিলিয়েশন' বা মানহানি করছে প্রতি পদে পদে।

"এখানে (কানাডায়) আসার পরে আমূল পরিবর্তন যেটা পেলাম, তারা (কানাডা সরকার) স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসে আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছে, তারা বলছে স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আমরা আপনার পাশা আছি। থাকার ব্যবস্থা সবকিছু তারা অ্যারেঞ্জ করে দিচ্ছে।"

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী:

বিচারপতি সিনহার ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফিরতে চান। এবং ফিরে তিনি দাতব্য কাজে নিজেকে যুক্ত করতে চান।