Thank you for trying Sticky AMP!!

যে আদালতে হচ্ছে ২১ আগস্টের মামলার বিচার

নাজিমুদ্দিন রোডের এ আদালতে হচ্ছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার। ছবি: আসাদুজ্জামান

বিচারক বললেন, এ আদালতের প্রতিটি জানালা, প্রতিটি পাখা, প্রতিটি লাইট, প্রতিটি চেয়ার বড় চেনা। আদালত যেন পরম আত্মীয় হয়ে গেছে।


রায় ঘোষণার তারিখের আগে স্মৃতিকাতর হয়ে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে এই আদালতের অবস্থান। হালকা খয়েরি রঙের এ ভবন দুইতলা। অনেকের কাছে এটি ‘লাল দালান’ হিসেবে পরিচিত। এর সামনে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার।

১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় দলটির ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার মামলার বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। এখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মামলার বিচারও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভেতর-বাহির
আদালতের এজলাস বসে দ্বিতীয় তলায়। সাদা রঙের কক্ষটি লম্বাকৃতির। দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১৫০ হাত, প্রস্থ ৩০ হাত। পশ্চিমাংশে লাল সালুতে ঘেরা বিচারকের বসার স্থান। এর ঠিক সামনে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার চেয়ার-টেবিল। এর সামনে উত্তর পাশে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বসার স্থান। এর পেছনেই আসামিদের কাঠগড়া।

রায় ঘোষণার দিন ঠিক হওয়ার পর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আদালত থেকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

দক্ষিণ অংশে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের বসার স্থান। সেখানে সাক্ষীর কাঠগড়া। পুরোনো এই ভবনে আছে ১২টি ফ্যান। কক্ষের একেবার পশ্চিম দিকে বিচারকের খাসকামরা আর পূর্ব দিকে সরকারি কৌঁসুলির কক্ষ। এজলাসের দক্ষিণাংশ জুড়ে বারান্দা, যা লোহার জানালা দিয়ে ঘেরা। সেখানকার দেয়ালে আছে একটি আয়না।

আসামিদের বসার স্থান দুই ভাগে ভাগ করা। কাঠগড়ার পূর্ব দিকে জঙ্গি আসামিরা বসেন, পশ্চিমাংশে অন্য আসামিদের বসার স্থান। ৪৯ জন অভিযুক্ত আসামির মধ্যে ১৮ জন জঙ্গিসহ ২৩ আসামি কারাগারে। জামিনে ছিলেন সাবেক তিন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) আটজন।

সবার আগে বাবর
যখন ভয়াবহ এই গ্রেনেড হামলা হয় তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। এ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত আসামি তিনি। কাঠগড়ায় সবার আগে তিনি বসেন। তাঁর পেছনে বসেন বিএনপির নেতা সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। তাঁর ডানে বসেন খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম ডিউক। তাঁর পাশে বসেন সাবেক তিন আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, শহুদুল হক ও আশরাফুল হুদা। এঁদের পাশে বসেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম। তাঁদের পেছনে বসেন জঙ্গি আসামিরা। তাঁরাও চেয়ারে বসেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রধান আসামি জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের (ফাঁসি কার্যকর) ভাই মুহিবুল্লাহ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আদালত আজ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বিচারের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছি। এই চেয়ারে বসে আসামিদের দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেছি।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা
যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার এ মামলার বিচারকাজ শেষ হলো। এখন কেবল রায়ের অপেক্ষা। আদালত বললেন, মামলাটি রায়ের পর্যায়ে এসেছে। আজকের পর আর এক দিন তিনি আদালতে এসে রায় ঘোষণা করবেন। এ সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে/ সমানে আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার’ পড়ে শুনিয়ে বিচারক বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে আসামিপক্ষ যত কথা বলতে চেয়েছেন তা বলার সুযোগ তিনি দিয়েছেন। কাউকে কখনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি।

মোবাইলে শেষ কথা
রায় ঘোষণার আগে সাবেক তিন আইজিপিসহ আটজনের জামিন কেন বাতিল করলেন সেই কারণ আদালত নিজেই বলেন। বিচারক বলেন, জামিনে থাকলে বিচারের সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আসামিদের আইনজীবীরা এর আগে আদালতে যুক্তি দেখাচ্ছিলেন, সাবেক তিন আইজিপিসহ অন্যরা কোনো দিন জামিনের অপব্যবহার করেননি।
আসামিদের অনেকে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চান আদালতে। বিচারক সেই আবেদন তখন নাকচ করেন।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত এক জঙ্গি আসামি ছবি: সাইফুল ইসলাম

বেলা দুইটার আগে যখন রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন আদালত, তখন দেখা যায় সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদাসহ অন্যরা মোবাইলে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কারাগারে নেওয়ার সময় আদালত ভবনের নিচতলায় আসেন আসামিদের স্বজনেরা। আদালতের এজলাস থেকে নামার পর বাবর হাত উঁচু করে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে দিয়ে হেঁটে যান।

আদালতের চারপাশে সতর্ক পাহারায় ছিলেন বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বিচারকাজে সহযোগিতা করার জন্য আসামি ও দুপক্ষের আইনজীবীসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিচারক বলেন, ‘বিচারিক কার্যক্রম আজ শেষ হয়ে যাবে। আরেক দিন আমাকে এখানে আসতে হবে। আদালতের কোনো আচরণে কষ্ট নেবেন না।’