Thank you for trying Sticky AMP!!

যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ কেমন কৌশল!

অষ্টম শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচার কিছু কৌশল হিসেবে অন্যকে আকর্ষণ করে এমন পোশাক না পরা, বাড়িতে একা না থাকাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও আপত্তি উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহল এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভও জানিয়েছেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বইয়ে মেয়েদের ওই সব কৌশল শেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক ও দুঃখজনক। একদিকে দেশে উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকেও মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণাকে পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। কার কাছে প্রতিকার চাইব?

ওই বইয়ে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করা-সংক্রান্ত সপ্তম অধ্যায়ে যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বলা হয়েছে। ৬৫ নম্বর পৃষ্ঠায় পাঠ-৩-এ বলা হয়েছে, যৌন নিপীড়ন সমবয়সীরা ছাড়াও যেকোনো নিকট আত্মীয়, পরিচিত ব্যক্তি, বয়স্ক যেকোনো সদস্যের মাধ্যমে হতে পারে। এসব প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ‘যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে’—সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাড়িতে কখনোই একা না থাকা। পরিচিত, অপরিচিত কারও সঙ্গে একা বেড়াতে না যাওয়া। পাড়ার বখাটে দলের হয়রানিতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে কৌশলে উপেক্ষা করা। যেমন জুতা খুলে দেখানো, চড় দেখানো, গালাগাল ইত্যাদি না করে বুদ্ধির সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
রাজধানীর লালমাটিয়ায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বইটি পড়ান—এমন একজন শিক্ষিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এগুলোর প্রায় সব কটিই কোনো যুক্তির মধ্যে পড়ে না। তবে পড়ানোর খাতিরে বাচ্চাদের পড়াতে হয়েছে। বাচ্চারা প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছে, তাহলে তারা কোথায় নিরাপদ? ঘরেও কেন একা থাকতে পারবে না? কোন ধরনের পোশাক পরতে হবে?’
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কেউ কেউ বলছেন, যৌন নির্যাতন বা নিপীড়নের ঘটনায় সব সময় মেয়েদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়। প্রথমেই আঙুল তোলা হয় পোশাকের বিষয়টিতে। এখন পাঠ্যপুস্তকেও এ বিষয়টিকেই সমর্থন দেওয়া হয়েছে।
গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বইটির প্রথম মুদ্রণ হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পরে পুনর্মুদ্রণ করা হয় গত বছরের জুনে। বইটি রচনা করেছেন ছয়জন নারী লেখক। সম্পাদনা করেছেন দুজন নারী।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বইগুলো বিশেষজ্ঞরা লেখেন উল্লেখ করে গবেষণা কর্মকর্তা কানিজ ফৌজিয়া খানমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে কানিজ ফৌজিয়া খানম প্রথম আলোকে বলেন, পাঠ্যবইগুলো অনেকে মিলে লেখেন। যৌক্তিক মূল্যায়ন হয় এবং তা সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। এ কৌশলগুলো সম্পর্কে কারও কোনো পরামর্শ থাকলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।