Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজনীতি মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার, ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছে

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনয়নে জন তহবিলের বিধান প্রবর্তন’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা। ছবি: ফোকাস বাংলা

রাজনৈতিক তহবিলে অর্থের জোগানের ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে জানা যায় না, দলীয় প্রধানের নির্বাচনে অপরিমিত ব্যয় সুনির্দিষ্ট না থাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম দুর্বলতা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁদের মতে, রাজনীতি এখন মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার। এ জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির দিকে ঝুঁকছে। প্রকৃত রাজনীতিবিদেরা সুযোগ পাচ্ছেন না। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দল হলেও সেখানেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের অভাব।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনয়নে জন তহবিলের বিধান প্রবর্তন’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনীতিবিদ, ব্যবসা ও মুনাফা একাকার হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক। বর্তমান সংসদে ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী রাজনীতিক রয়েছেন। তবে মনোনয়নের কত টাকা ব্যয়, এটা দলীয় প্রধান ছাড়া কেউ জানেন না। এটা যেন ম্যাজিকাল খরচ, যা কোথাও প্রদর্শন করতে হয় না। তিনি বলেন, রাজনীতি এখন মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার। এ জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশ, আদর্শিক প্রচার ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চার আহ্বান তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, প্রকৃত রাজনীতিবিদ অর্থ-বৈভবের কাছে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। এখন অর্থ যাঁর মনোনয়ন তাঁর। রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ের-ব্যয়ের হিসাবে ব্যাপক অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদের বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে আয়ের-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার জন্য দেয়। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এটা দেওয়া না-দেওয়া সমান কথা। এটা কীভাবে হয় আপনারা জানেন।

রাজনৈতিক দলগুলোকে অনেকে কালোটাকা অনুদান দেয় মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, ‘অনেক সময় ব্যবসায়ীরা কালোটাকা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান দেয়। এ জন্য এসব অর্থ প্রকাশ করা উচিত।’ ভারতের মতো বাংলাদেশেও রাজনৈতিক দলগুলো কী করা যাবে, কী যাবে না—সেটা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারেও বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে বলা হয়েছে—একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা। যা এখন বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। নির্বাচনের সময় অদৃশ্য ও কালোটাকার প্রবাহ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ বলেন, ‘১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়ে গেছে। এখন আর জাতীয় ঐক্য নেই। তাই রাষ্ট্র এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এখন চাইলেও ভালো কাজ করা সম্ভব হয় না।’ তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের ব্যবসা থাকা অপরাধ, এ ধরনের চিন্তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগে মনোনয়ন-বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করেন হানিফ।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম। ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান, সুজনের দিলীপ কুমার সরকার, ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টারের শাহজাদী বেগম, গণতন্ত্রী পার্টির খায়রুল আলম প্রমুখ।