Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজু ভাস্কর্যের সামনে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৩ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

একই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা আরেকটি মানববন্ধন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার বিচার দাবি করেন এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনেরও দাবি তোলেন। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী সামান্থা শারমিন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, বিশ্ব ধর্ম সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া অনিমেষ, নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের সদস্য নূর আরাফাত, আলমগীর কবির সুমন।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৩ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

মানববন্ধন শেষে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর অফিসের সামনে আসেন। এ সময় তাঁরা প্রক্টরকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু তাঁদের সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি প্রক্টর। প্রক্টর তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যে সহিংসতা হয়েছে, সেটার তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তার কাজ কিছু দূর এগিয়েছে।’

প্রক্টর আরও বলেন, ‘যাঁদের ওপর হামলা হয়েছে, তাঁদের পরবর্তী সময়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকলে অনেকেই আসেন না। তাই আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারছি না।’ তদন্তে সহায়তা করার জন্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান তিনি।

প্রক্টরের বক্তব্য শেষ হলে নিপীড়নবিরোধী ছাত্রসমাজ প্রক্টরের অফিসের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় কী কথা হলো জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তাঁরা বলেন, ‘প্রক্টর স্যারকে আমরা যেসব প্রশ্ন করেছিলাম, তার কোনোটিরই উত্তর তিনি ঠিকমতো দেননি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আবার হামলা হলে পদত্যাগ করবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৩ জুলাই। ছবি: সাইফুল ইসলাম

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধনে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তানভীরুল হক সৈকত, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক শেখ সাগর, জহুরুল হক হলের সহসভাপতি কামালউদ্দীন রানা, জিয়া হলের উপপ্রচার সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, বিজয় ৭১ হলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক সাকিব হাসান, এস এম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক।

মানববন্ধন চলার সময়ে পেছনে গতকাল হামলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতিভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ‘গুজবকে না বলুন’, ‘আবেগ সরিয়ে বিবেক আনুন’, ‘রাশেদ নূরের ছড়ানো গুজবে কঠোর জবাব দেবে ছাত্রসমাজ’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছিলেন তাঁরা।

মানববন্ধনে তাঁরা বলেন, কোটা সংস্কারের নামে একটি দল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট ঘোষণার পরও এ ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৩ জুলাই। ছবি: দীপু মালাকার

বক্তব্যের একপর্যায়ে তানভীরুল হক সৈকত বলেন, ‘রাশেদ এবং নূর (সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ও নূর হোসেন) অন্য রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা যেকোনো অন্যায় প্রতিহত করব।’

এ সময় আপনি ছাত্রলীগের নেতা কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীরুল হক সৈকত বলেন, ‘আমি প্রথমে ছাত্র, তারপর ছাত্রলীগ। আমরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।’ গতকাল কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শাহবাগে ছিলাম, শহীদ মিনারেও গিয়েছিলাম। কিন্তু হামলায় অংশ নিইনি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর গতকাল সোমবার সকালে হামলা চালানো হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করতে জড়ো হওয়ার সময় তাঁদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শনিবারও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।