Thank you for trying Sticky AMP!!

রুক্ষ শহরে প্রকৃতির স্পর্শ

নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা লেক সংস্কার করে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হবে l ছবি: হাসান রাজা

নারায়ণগঞ্জ শহরে গাছপালা তেমন নেই। অপ্রশস্ত সড়কের দুই পাশে গায়ে-গায়ে লাগানো অসংখ্য দালানকোঠা। পথগুলো যানবাহনে ঠাসা। সেই জটলা পার হয়ে এখন জিমখানা লেকের পাশে এসে দাঁড়ালে দম বন্ধ করা পরিবেশ থেকে মুক্তির স্বাদ মেলে।

লেকটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। উত্তর প্রান্ত দেওভোগ কাঠের দোতলা মহল্লায়, দক্ষিণ প্রান্ত যুক্ত হয়েছে মদিনা মার্কেটের সামনে বাবুরাইল খালের সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে লেকের সংস্কারকাজ করছে। ইতিমধ্যে ৯০ ভাগের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার এই প্রকল্প শেষ হচ্ছে।

ঢাকায় যেমন হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জের জিমখানা লেকটিও সংস্কার করে সেভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে। গত ৩০ অক্টোবর লেকের পাড়ে গিয়ে দেখা গেল, উত্তর প্রান্তে লোকজনের বসার জন্য অর্ধবৃত্তাকার সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে বাঁধানো আসন তৈরি করা হয়েছে। তার ওপর ছাউনির মতো করে সুদৃশ্য ধাতব কাঠামো। সেই কাঠামোর পাশে মৌসুমি ফুলের গাছ রয়েছে। এর পাশে পূর্ব ধারে তৈরি করা হচ্ছে উন্মুক্ত মঞ্চ। এই প্রান্তে ছিল বিশাল বস্তি, আর ময়লার ভাগাড়। এখন সেখানে মাটি ফেলে করা হয়েছে মাঠ। উভয় পাড়ে বসার জন্য আরও দুটি প্যাভিলিয়ন এবং লেকের ওপরে ঝুলে থাকা দুটি ‘ভিউয়িং ডেক’ তৈরি করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছেন সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী এস এম মশিউর রহমান। তিনি বলেন, পূর্ব দিকের খোলা জায়গায় একটি মাঠ ও বাগান থাকবে। বাকি অংশে স্কেটিং ও সাইকেল জোন, পুরুষ ও নারীদের জন্য দুটি পৃথক জিমনেসিয়াম ও দুটি টয়লেট করা হবে। এ ছাড়া পুরো প্রকল্প এলাকা সবুজায়ন করা হবে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে বাবুরাইল খালের খননকাজও অনেক এগিয়েছে। খালের পশ্চিম প্রান্ত যুক্ত হবে জিমখানা লেকের সঙ্গে আর পূর্ব প্রান্ত মিশবে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মণ্ডলপাড়া সেতু থেকে টানবাজারের মিনা বাজার এলাকা পর্যন্ত বাবুরাইল খালের খননকাজ চলছে। পুরো খনন শেষে পাড় বাঁধ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হবে। খালের ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননের পর সেখানে নৌকা ভ্রমণসহ নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।

তবে বাবুরাইল খাল খননের জন্য হুমকিতে পড়েছে খালপাড়ে রেলওয়ের জায়গায় থাকা কয়েক শ দোকান। তাঁদের অনেকেই রেলের কাছ থেকে বাণিজ্যিক লিজ নিয়ে বহু বছর থেকে এখানে ব্যবসা করে আসছেন। মেসার্স এফ করিম রাইস এজেন্সির মালিক তোফাজ্জল হোসেন জানান, ৯৯ বছরের বাণিজ্যিক ইজারা নিয়ে তাঁরা এখানে চালের ব্যবসা করছেন। এখন সিটি করপোরেশন থেকে তাঁদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য তাঁরা আদালতে রিট আবেদন করেছেন।

জিমখানা লেক ও বাবুরাইল খাল সংস্কার প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোটবেলায় শহরে অনেক খাল, পুকুর দেখেছি। নারায়ণগঞ্জে ৩০টি খাল ছিল। অনেক খাল, পুকুর ভরাট বা দখল হয়ে গেছে। এই খাল, পুকুর, খেলার মাঠগুলো উদ্ধার ও সংস্কার করা হচ্ছে। জিমখানা লেক ও বাবুরাইল খাল সংস্কার করে বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত করা হচ্ছে। শহর ছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জে ৪০টি পুকুর ও কদমরসুলে ৩১টি পুকুর, পঞ্চবটি এলাকায় ৬টি পুকুর সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০টির বেশি খেলার মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে। পরিবেশ, বিনোদন, খেলাধুলার ব্যবস্থা করার জন্য এই কাজগুলো জরুরি ছিল।’ উচ্ছেদের হুমকিতে পড়া দোকানগুলো সম্পর্কে মেয়র বলেন, যাঁরা রেলের কাছ থেকে বৈধভাবে লিজ নিয়ে দোকান করেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন সংস্কার করা জিমখানা লেক নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী আনন্দিত। মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী আফরিন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, এই উদ্যোগটি খুব ভালো। আগে এখানে ভাগাড় ছিল। পরিবেশ ছিল অস্বাস্থ্যকর। এখন বৃষ্টির পানিও এসে জমবে আর সুন্দর একটি বিনোদনকেন্দ্র হলো।