Thank you for trying Sticky AMP!!

রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: আহতরা কেউই আশঙ্কামুক্ত নয়

বাজার করে নিজের ঘরে ফিরছিলেন জান্নাত বেগম। পথে বেলুন বিক্রেতার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। সিলিন্ডারের টুকরার আঘাতে জান্নাতের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছবি : প্রথম আলো

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় স্ত্রী রুপালি আর দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন রিকশাচালক জুয়েল সরদার (২৯)। প্রতিদিনের মতো গতকাল বুধবার বিকেলবেলা রিকশা চালাতে বের হন। রূপনগর ১১ নম্বর সড়কে একজনকে গ্যাস বেলুন বিক্রি করতে দেখে জুয়েল সরদারের ইচ্ছে হয়, ছোট ছেলে জিসানের জন্য একটি বেলুন কিনবেন। বেলুন বিক্রেতার কাছে যেতেই বিকট শব্দে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। মুহূর্তের সব ইচ্ছে মিলিয়ে যায় জুয়েলের। সিলিন্ডারের টুকরো লেগে বাম হাত ভেঙে গেছে তাঁর। চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

চিকিৎসকেরা জানান, জুয়েলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কথা হয় জুয়েল সরদারের স্ত্রীর রুপালী সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর বাম হাত ভেঙে গেছে। বাম পাশে বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে গেছে। এ যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না।’

জুয়েলসহ গতকাল রূপনগরে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন শিশুসহ আহত ছয়জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা হলেন শিশু মিজান (৬), জনি(৯) সিয়াম (১১), গৃহবধূ জান্নাত বেগম (২৬), রিকশাচালক জুয়েল ও বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদ (৩০)। এদের মধ্যে নয় বছর বয়সী জনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছোট বোন তাসনিয়ার জন্য বেলুন কিনতে যায়। এরপরই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জনি। গুরুতর আহত জনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের অধীনে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।

জনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়পাইশিয়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে। তার বাবা রিকশার গ্যারেজে কাজ করেন। সুলতান মিয়া পরিবার নিয়ে রূপনগরের ১১ নম্বর সড়ক সংলগ্ন একটি বস্তিতে থাকেন। জনি তাঁর চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তৃতীয় সন্তান।

জনির মা পারভিন আক্তার বলেন, তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে জনি ছোট বোন তাসনিয়ার জন্য বেলুন কিনতে গিয়েছিল। বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হলে জনির মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে। এমনকি ওর চোখেও আঘাত লাগে।

একই ঘটনায় আহত ছয় বছরের শিশু মিজানুর রহমান ঢাকা মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। মিজানের বাবা ভ্যানচালক রোকন মিয়া। মা মিনা আক্তার গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে মিজান বড়। মিজান রূপনগরের একটি স্কুলে প্লে গ্রুপে পড়ে। রোকন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন,মিজান স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে বেলুন ফুলানো দেখতে যায়। বিক্রেতার কাছে যেতেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। ঘটনার পর মিজানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেলে ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যায়। এখনো সে অচেতন। মিজানের পেটের দিকে কিছু নাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

আহত গৃহবধূ জান্নাত বেগমের স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় কাচা বাজার করে বাসায় ফিরছিলেন তাঁর স্ত্রী। তখনই বিস্ফোরণ। গ্যাস সিলিন্ডারের টুকরার আঘাতে জান্নাতের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পেটেও আঘাত লেগেছে। রূপনগরের ফজল মাতবরের বস্তিতে মেয়ে সুমাইয়া (৫) ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রিকশাচালক নজরুল।

আহত আরেক শিশু সিয়ামের মামা আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিয়ামের বাবা তোফাজ্জল হোসেন রূপনগর এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনে। সিয়াম তার বাবার কাছে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বেলুন বিক্রেতা আবু সাইদের গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কাঠালিয়াপাড়া গ্রামে। মিরপুরের সাড়ে এগারো নম্বর এলাকায় বসবাস করেন। বিস্ফোরণে তাঁর বাম হাত কবজি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাম পায়ের ঊরুতে ক্ষত রয়েছে। সাইদ জানান, তিনি বেলুনের ব্যবসা ১০-১২ দিন ধরে করছেন। এর আগে তিনি দরজির কাজ করতেন। সাইদের বিরুদ্ধে রূপনগরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশি প্রহরায় ঢাকা মেডিকেলের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাইদের হাতের আঘাত গুরুতর। এ ছাড়া তাঁর পায়ে ও পেটে আঘাত রয়েছে। তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। আহত অন্যদের মধ্যে মিজান, জুয়েলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। অন্য তিনজনের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে, তবে তারা আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।