Thank you for trying Sticky AMP!!

রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার আসামিরা যে কারণে খালাস পেলেন

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় খালাস পান পাঁচ আসামি

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। খালাস পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে শাফাত আহমেদ, শাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, শাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী ফারুক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ আসামির খালাসের রায় শোনার পর দুই ভুক্তভোগী কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়ার কারণ উল্লেখ করেছেন।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন ধর্ষণের ঘটনার ৩৮ দিন পর কেন মামলা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে আদালত রায়ে বলেছেন, ধর্ষণ মামলা প্রমাণ করতে হলে মেডিকেল প্রতিবেদন খুব জরুরি। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিহিত বস্ত্রের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলায় দুটি প্রতিবেদনেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

রায়ে আরও বলা হয়, ধর্ষণের মামলায় যদি মেডিকেল প্রতিবেদন না থাকে, সে ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য খুব জরুরি। মেডিকেল প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুক্তভোগী দুজনকে জোরপূর্বক ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। বরং আগে থেকে তাঁরা সম্পর্কে জড়িয়েছেন। একজন ভুক্তভোগী আদালতে মিথ্যা তথ্যও দিয়েছেন।

রায়ে বলা হয়, মামলার আসামি নাঈম আশরাফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তবে তাঁর জবানবন্দির তথ্য মামলার সাক্ষ্য ও মেডিকেল প্রতিবেদনকে সমর্থন করে না। তাঁর দেওয়া জবানবন্দি অসত্য। জবানবন্দি দেওয়ার আগে সাত দিন তিনি পুলিশি হেফাজতে ছিলেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা স্বেচ্ছায় দেননি, আদালতে লিখিত দরখাস্ত দিয়ে বলেছিলেন আসামি নাঈম আশরাফ। অপর আসামিদের জবানবন্দিকে আইনের পরিভাষায় স্বীকারোক্তি বলার সুযোগ নেই। কারণ, তাঁরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে কোনো বক্তব্য দেননি।

রায়ে আরও বলা হয়, মামলার আসামি শাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার সঙ্গে শত্রুতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা থানায় বসে থেকে এই মামলা করান।

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে রায়ে আদালত বলেছেন, সেদিন ওই দুই ভুক্তভোগী রেইনট্রি হোটেলে যান, সেটি প্রমাণ করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। প্রকৃত কারণ ছাড়াই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। হোটেলের কোনো সাক্ষী বলেননি, সেদিন ওই দুই নারী হোটেলে ছিলেন। এমনকি হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় ওই দুই ভুক্তভোগীর নাম নেই।

ভবিষ্যতে সঠিক তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর পুলিশ যেন মামলা গ্রহণ না করেন, সে ব্যাপারেও রায়ে বলা হয়।

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ৮ জুন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে শাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ১৩ জুলাই প্রধান আসামি শাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন শাফাত ও তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফ।