Thank you for trying Sticky AMP!!

মেয়ের কান্না, 'বাবা তো আর ফিরে এলেন না'

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত সত্তরঞ্জন বনিকের স্ত্রী, সন্তানেরা যেন শোকে পাথর। রামগোপাল পুর, মুন্সিগঞ্জ সদর, ৩০ জুন। ছবি: মো. ফয়সাল হোসেন।

‘দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি। বাড়ি থেকে বের হলে আক্রান্ত হতে পারি। এই ভয়ে বাবা সবাইকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, বাড়ি ফিরে বাজার–সদাই থেকে শুরু করে যা যা কাজ আছে, সব তিনি করবেন। কই, বাবা তো আর ফিরে এলেন না!’

এমন কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ঢাকার সদরঘাটের কাছের বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত সত্তরঞ্জন বনিকের (৬৫) ছোট মেয়ে জয়া বনিক। নিহত সত্তরঞ্জন বনিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামগোপাল পুরে। এই প্রতিবেদক আজ মঙ্গলবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন, নিহতের স্ত্রী, সন্তানেরা যেন শোকে পাথর।

নিহত সত্তরঞ্জন বনিক রাজধানীর পুরান ঢাকার নলগোলায় পাইকারি প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসা করতেন। তাঁর বড় মেয়ে দোলা বনিক স্বামীসহ রাজধানীর ওয়ারীতে থাকেন। মুন্সিগঞ্জে বাবার বাড়ির আঙিনায় বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে বাবা প্রতিদিন ঢাকায় আসা–যাওয়া করতেন। বাবাকে আমার বাসায় থেকে ব্যবসা করতে বলেছিলাম। বাবাও থাকতে রাজি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারও আমার বাড়িতে ছিলেন। ছোট ভাইটা অসুস্থ থাকায় বাবা মুন্সিগঞ্জের বাড়ি চলে যান। সাধারণ ছুটির পর থেকে পৌনে আটটার লঞ্চে ঢাকা যেতেন। বাবার সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো। রাগ করে রোববার কথা বলিনি। ভেবে ছিলাম সোমবার দুপুরে ফোন দেব। বাবাকে ফোন দিলাম কিন্তু আর কথা হলো না।’

স্বামীর কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন স্ত্রী রত্না বনিক। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে বার হইতে না করছিল। তিনিই যে বাড়ি ফিরবেন না, কে জানত। ঝড়-তুফান আসত, তখন লঞ্চটা ডুবে যেত। তখন যদি সে মারা যেত, তাহলে মনটারে বুঝাইতে পারতাম। এমন কইরা চইলা গেল, মানতে পারি না।’

গত সোমবার সকাল নয়টার দিকে এমএল মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি এলাকা থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। সদরঘাটের কাছেই ফরাশগঞ্জ ঘাট এলাকায় নদীতে লঞ্চটি ডুবে যায়। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চ সদরঘাট লালপট্টি থেকে চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি ডুবে যায়। ওই ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত ৩৩ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে একজনকে। নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। ধাক্কা দেওয়া লঞ্চ ময়ূর-২ জব্দ করা হয়েছে। এটির চালক পলাতক।

এ ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক, মাস্টার, সুকানিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে নৌপুলিশ সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক মো. শামসুল বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন।