Thank you for trying Sticky AMP!!

লাগেজের অপেক্ষায় বিমানবন্দরে দিনাতিপাত হাজিদের

লাগেজের অপেক্ষায় তিন দিন ধরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন ৬০ জনের বেশি হাজি। তাঁরা গত শুক্রবার রাত নয়টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি ০৩৬) সৌদি আরব থেকে ঢাকায় আসেন। কিন্তু তাঁদের মালামাল না আসায় বিমানবন্দরেই দিনাতিপাত করছেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনালে এসব হাজির মধ্যে মুয়াল্লিমসহ চারজনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, ওই ফ্লাইটে ৩০০ জন হাজি এসেছিলেন। তাঁদের কারোরই মালামাল বা লাগেজ আসেনি। অন্যরা বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগ জানিয়ে যাঁর যাঁর গন্তব্যে চলে গেলেও ৬০ জনের বেশি হাজি রয়ে গেছেন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা লাগেজ নিয়েই বাড়ি যাবেন। একবার গ্রামে চলে গেলে তাঁদের পক্ষে ঢাকায় এসে লাগেজ সংগ্রহ কঠিন হয়ে উঠবে। আবার ঢাকায় কোনো আত্মীয়ও নেই যে সেখানে গিয়ে উঠবেন। হোটেলে থাকার মতো পর্যাপ্ত টাকাও তাঁদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন।
মুয়াল্লিম জালাল উদ্দিন বলেন, ‘লাগেজ কখন আসবে, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলছে না। আমাদের যদি বলত আট দিন পরে তোমাদের লাগেজ আসবে। আমরা আট দিন পর আসতাম। হাজিরা লাগেজ ছাড়া বাড়ি যেতে চাইছেন না।’
এসব হাজি দেশে ফিরতে জেদ্দা বিমানবন্দরে আসেন গত বৃহস্পতিবার। ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায় সেখানে দীর্ঘ সময় ভোগান্তি পোহান। এরপর তাঁদের ফ্লাইট পরদিন শুক্রবার রাত নয়টায় ঢাকায় পৌঁছায়। সবাই একই কাপড়ে কয়েক দিন ধরেই আছেন। তাঁদের সাদা পাঞ্জাবি বাদামি রং ধারণ করেছে। হাতে নগদ টাকা না থাকায় কেউ কেউ খাবারদাবারেও কষ্টে আছেন।
এঁদেরই একজন বগুড়ার কেরামত আলী বলেন, ‘গামছা বিছাইয়ে, কার্টন বিছাইয়ে মাইঝেত শুয়ে থাকি। রিয়াল (সৌদি মুদ্রা) শেষ, টাকাও নাই। কষ্ট করে থাকিচ্ছি। লাগেজ না পালি বাড়ি যাবার পারি না বাবা।’ বিমানের কেউ খোঁজ নিতে এসেছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিডা আসবি?’
আরেক হাজি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘সবচেয়ে কষ্ট হয় খাওয়ার। এখানে খাবারের দাম বেশি। আর বাইরের খাবারের দোকান অনেক দূরে। আজ এক প্লেট খাইছি। সারা দিন আর খাইনি।’
লাগেজ কবে নাগাদ আসতে পারে—এ ব্যাপারে বিমান কর্তৃপক্ষ কিছু বলেছে কি না জানতে চাইলে হাজি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজকালের মধ্যে আসবে বলছে। আবার বলছে, তারা কিছু জানে না। লাগেজ না পাওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরেই থাকব।’
এদিকে লাগেজ নিয়ে হাজিদের এ ভোগান্তির বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে গতকাল বিমানবন্দরে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি লাগেজ-বিড়ম্বনা দ্রুত নিরসন এবং অপেক্ষমাণ হাজিদের খাওয়ার সুব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি যাত্রীদের কোনো বিড়ম্বনা বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দেন। বিমান মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
সেখানে যাত্রীদের লাগেজ বিলম্বে প্রাপ্তির কারণ জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্ত্রীকে জানান, আরবে নিরাপত্তার কারণে চেকিং বিলম্বিত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লাগেজ বিলম্বে পৌঁছাচ্ছে। ফ্লাইট বিপর্যয়ের বিষয়টি শিগগিরই সমাধান হবে বলেও মন্ত্রীকে জানান তাঁরা।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গতকাল জেদ্দা থেকে হাজিদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে। এসব হাজির লাগেজ তাঁদের ফ্লাইটেই এসেছে। তবে ফ্লাইটসূচি বিপর্যয়ের কারণে তাঁদের জেদ্দা বিমানবন্দরে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাজিরা। এঁদের একজন ফেনীর মুজিব ভূঁইয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মুয়াল্লিম আমাদের জেদ্দা বিমানবন্দরে নিয়ে আসেন। এরপর বিমানবন্দরেই ছিলাম। ঢাকায় নামছি আজ (রোববার) দুপুর দুইটায়। লাগেজ পাইলাম সন্ধ্যার দিকে।’