Thank you for trying Sticky AMP!!

লিমনদের ঘরে আগুন, জমি দখলের অভিযোগ

লিমন হোসেন

র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির লিমন হোসেনদের ঘরে আগুন লাগিয়ে তাঁদের নির্মাণাধীন বাড়ির জমি রাতের আঁধারে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার গভীর রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফিরোজ মিয়া নামে একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ওই জমি দখলে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে সাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির হাওলাদারের বিরুদ্ধে। আর দখলের অভিযোগ উঠেছে তাঁর চাচাতো ভাই আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে।

লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ওই দুজনের বিরুদ্ধে আগুন লাগানোর অভিযোগ করে রোববার বলেন, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। হুমায়ুন কবির বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দিচ্ছেন।

তবে হুমায়ুন কবির বলেছেন, ‘লিমনদের বসতবাড়ির জমি দখল ও আগুন দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। ওই সম্পত্তির মালিক আমার চাচাতো ভাই আবদুল হাই। তারপরও আপস-মীমাংসায় যদি তাঁরা সম্পত্তি পান, তবে তা ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি লিমনের দুর্দিনে পাশে থেকে সহায়তা করেছিলাম।’ 

আর আবদুল হাই বলেন, ‘আমার সম্পত্তিতে অবৈধভাবে তোফাজ্জেল (লিমনের বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন) ভবন ওঠাচ্ছিলেন। তাই বাধা দেওয়ায় তাঁরা আগুন দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।’
লিমনের বাবার ভাষ্য, শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বসতঘরের সামনে রান্নাঘরে আগুন দেখে স্ত্রী হেনোয়ারা বেগম চিৎকার দেন। শোবার ঘরের বেড়াতেও কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তাঁদের সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। এ কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে হুমায়ুন কবির ও আবদুল হাইসহ ৩০ জনের একটি দল নির্মাণাধীন ভবনের তিন শতক জমি দখল করে নেন। পাশাপাশি রড ও অন্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে যান। দখল করা জায়গায় বাঁশ পুঁতে ও পলিথিন টানিয়ে থাকছে আবদুল হাইয়ের পরিবার।
লিমনের পরিবার ও প্রতিবেশীদের সূত্র বলেছে, তোফাজ্জেল সপরিবার তাঁর মা আনোয়ারা বেগমের সম্পত্তিতে তোলা ঘরে থাকেন। এখানে তাঁর খালা মনোয়ারা বেগমেরও সমান সম্পত্তি রয়েছে। খালা তাঁর আত্মীয় মোস্তফা মিয়ার কাছে ৪০ শতক সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছেন। যদিও খালার অংশ ছিল ২৮ শতক। পরে মোস্তফা মিয়া ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ ওই ৪০ শতক জমি আবদুল হাইয়ের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু তিনি জায়গা বুঝে পাননি। একপর্যায়ে লিমনের বাবার অংশের সম্পত্তিও তিনি দাবি করেন। এ নিয়ে লিমনদের পরিবার ও আবদুল হাইয়ের মধ্যে রাজাপুর আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা চলে। মামলায় লিমনের বাবার পক্ষে রায় হয়। এলাকার চেয়ারম্যান ও অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সালিসেও লিমনের বাবার পক্ষে মত যায়। এ অবস্থায় সম্প্রতি লিমনের বাবা বসতঘরের সামনে তিন শতক জমিতে ভবন তৈরির কাজ শুরু করেন। এই তিন শতক জমিই শনিবার রাতে দখল করার অভিযোগ ওঠে।
রোববার লিমনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁদের রান্নাঘর ও শোবার ঘরের অনেকাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় আবদুল হাই সপরিবার অবস্থান করছেন।
লিমনের মা বলেন, ‘ভবনের কাজ শুরু করা থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন রাজমিস্ত্রিদের কাজ না করতে হুমকি দিয়ে আসছেন। আমার ছেলের ওপর যে জুলুম তার রেশ না কাটতেই আমাদের বসতঘরে আগুন দিয়ে জায়গা দখল করে নিল। আমি এদের বিরুদ্ধে মামলা করব। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জানতে চাইলে রাজাপুর থানার ওসি শামসুল আরেফিন বলেন, ‘এ ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। লিমনের পরিবার থেকে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’