Thank you for trying Sticky AMP!!

লিয়াকতের গুলিতেই সিনহার মৃত্যু হয়েছে

সিনহা মো. রাশেদ খান

আজ বুধবার (১২ জানুয়ারি) বেলা সোয়া একটা! কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তখন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপন করছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। যুক্তি শেষ হওয়ার পর মামলার রায় ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। এমন সময় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কান্নাকাটি শুরু করেন এবং বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু বলার জন্য ১০ মিনিট সময় চান। এরপর প্রদীপ বলতে থাকেন, সিনহার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি মোটেও জড়িত ছিলেন না। লিয়াকতই (বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক) গুলি করে সিনহাকে হত্যা করেছেন। গুলি করে সিনহাকে হত্যার পর তাঁকে (প্রদীপকে) খবর দিয়েছিলেন লিয়াকত। ওই ঘটনায় নিজেকে তিনি নির্দোষ দাবি করে আদালতের সহায়তা কামনা করেন।

প্রদীপের বক্তব্য শুনে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল কিছু বলেননি। তিনি (বিচারক) এ বিষয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য এজলাসে উপস্থিত বাদীপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে ইশারা দেন। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ৩৪২ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি কিংবা সাফাই সাক্ষ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এ কথা বলেননি যে লিয়াকতের গুলিতে সিনহার মৃত্যু হয়েছে। আজ এ কথা আদালতে কান্নাকাটি করে বললে বিশ্বাসযোগ্য হয় কী করে? তিনি (প্রদীপ) টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর এলাকায় কেউ খুন হলে দায়দায়িত্ব তাঁর ওপর বর্তায়। কীভাবে খুন হলো, সেই ব্যাখ্যা তাঁকেই দিতে হবে। ওসি প্রদীপ ঘটনার পর গত এক–দেড় বছরে সেই ব্যাখ্যা দেননি। আজ দিলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
এরপর আদালত আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ করেন।

আদালত

আইনজীবীরা বলেন, বুধবার সকাল থেকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় কিছুতেই প্রদীপ জড়িত থাকতে পারেন না। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাঁকে (প্রদীপকে) ফাঁসিয়েছেন। কারণ, তিনি (প্রদীপ) টেকনাফের ইয়াবা নির্মূলে বড় ভূমিকা রাখেন। আর মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়ার মাধ্যমে প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। র‌্যাবের এ তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী র‌্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। সিনহা হত্যার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানান ওসি প্রদীপের এই আইনজীবী।
আদালত পরিচালনা করেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ মামলার ১৫ জন আসামি। সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়।

বেলা আড়াইটার দিকে সব আসামিকে প্রিজন ভ্যানে তুলে জেলা কারাগারে নেওয়ার সময় ভেতর থেকে কান্নাকাটি করে পুলিশ কনস্টেবল ও মামলার আসামি সাফানুল করিমসহ কয়েকজন চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘লিয়াকতের গুলিতে সিনহার মৃত্যু হয়েছে। গুলি করে সিনহাকে হত্যার আধা ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের চারজনকে (সাফানুল করিম, আবদুল্লাহ আল মামুন, কামাল হোসেন ও রুবেল শর্মা) ডেকে পাঠান লিয়াকত আলী। লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য আমাদের ডাকা হয়। আমাদের চারজনের কী দোষ? আমরা নিরপরাধ। আমরা সরকারের সহায়তা চাই।’
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পিপি ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বুধবার চতুর্থ দিনে ওসি প্রদীপের পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। এর আগে মামলার অবশিষ্ট ১৪ জনের যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সিনহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে।
আইনজীবীরা বলেন, ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মামলার ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলার ১৫ আসামির সাফাই সাক্ষ্য হয়ে গেছে। এখন শুধু রায়ের অপেক্ষা।

Also Read: সিনহা হত্যা মামলার রায় ৩১ জানুয়ারি

আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।