Thank you for trying Sticky AMP!!

লেডিস পার্কে গভীর নলকূপ!

উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের লেডিস পার্ক। এই পার্কেই নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। গতকাল তোলা ছবি। প্রথম আলো

পাশেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) খালি জায়গা আছে। কিন্তু রাজউক উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে লেডিস পার্কে নলকূপ স্থাপন করতে বলেছে ওয়াসাকে। সেক্টরবাসী মনে করেন, এতে বিশেষায়িত এই পার্কের পরিবেশ নষ্ট হবে।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি জানায়, লেডিস পার্ক ও সেক্টরের মাঠের মাঝখানে ২২ কাঠা খালি জায়গা আছে রাজউকের। ২০১১ সালে রাজউক সেই জায়গা থেকে ২ কাঠা (৫২/এ) প্লট করে কল্যাণ সমিতিকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। এখন সেক্টরবাসীর প্রয়োজনে তারা চায় সেখানে নতুন নলকূপ বসুক। কিন্তু রাজউক সে অনুমতি দিচ্ছে না। তারা লেডিস পার্কের ভেতরে নলকূপ বসাতে বলছে।
আর রাজউক কর্তৃপক্ষ বলছে, নলকূপের জন্য আবেদন করা জায়গাটি লে-আউট নকশা অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্লট। বিধি অনুযায়ী নিলাম ছাড়া তা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই নলকূপ স্থাপন করতে হলে লেডিস পার্ক বা খেলার মাঠেই করতে হবে।
১৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ৫ এপ্রিল তাঁরা রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে লেডিস পার্কে নলকূপ স্থাপনে তাঁদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। ১৬ এপ্রিল আবার তাঁরা রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুবারই চেয়ারম্যান জানান, লেডিস পার্কে জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। আর দ্বিতীয়বার দেখা করার পর তিনি জানান, খালি জায়গাটি বিক্রয়ের জন্য দরপত্র প্রকাশ করা হয়ে গেছে।
সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত দুই কাঠা জায়গাটিই আমরা নলকূপের জন্য চাচ্ছি। কিন্তু তারা মানছে না। সবকিছু ব্যবসানির্ভর হয়ে গেলে কীভাবে চলবে।’
এদিকে আবাসিক এলাকার ভেতর বাণিজ্যিক প্লট রাখা নিয়েও আপত্তি সেক্টরবাসীর। তাঁরা জানান, ১৩ নম্বর সেক্টর ঘিরে ৪টি ১০০ ফুট সড়ক আছে। যেখানে শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কফি শপ, হোটেল-রেস্তোরাঁর মতো অসংখ্য বাণিজ্যিক স্থাপনা রয়েছে।
সেক্টরবাসী মনে করছেন, আবাসিক এলাকার ভেতরে থাকা ওই খালি জায়গা লে-আউট নকশা অনুযায়ী যদি বাণিজ্যিক স্থাপনা হয়, তাহলে সেক্টরের আবাসিক পরিবেশ নষ্ট হবে। খালি জায়গাটির সামনের রাস্তাটি মাত্র ৩০ ফুট চওড়া। এ রকম ছোট রাস্তায় বাণিজ্যিক স্থাপনার অনুমোদন রাজউক দেয় কী করে?
কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পান্না বলেন, ২০১১ সালে এই খালি জায়গাটি বাণিজ্যিক থেকে আবাসিক করে সেখানে পাঁচটি প্লট করা হয়েছিল। তখন প্লটগুলো সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছিল রাজউক। কিন্তু সেক্টরবাসীর বাধার কারণে তা বাতিল করা হয়। তাঁর প্রশ্ন, তখন কোন বিধিতে প্রভাবশালী নেতাদের বাণিজ্যিক প্লট আবাসিক হিসেবে বরাদ্দ করেছিল রাজউক? অথচ এখন জনস্বার্থের বিষয়ও উপেক্ষিত হচ্ছে।
১৩ নম্বর সেক্টরে বর্তমানে দুটি পানির পাম্প রয়েছে। একটি গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ মসজিদের পাশে, অপরটি লেকের পাড়ে। এই দুটি নলকূপের প্রতি মিনিটে যথাক্রমে ২ হাজার ১০০ লিটার এবং ৩ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের ক্ষমতা আছে। কিন্তু সেক্টরের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার চাহিদার তুলনায় এটি অপর্যাপ্ত।
১৩ নম্বর সেক্টরে পানির সংকট ২০১৪ থেকে। ওই বছরই ওয়াসাকে আরেকটি নলকূপের প্রয়োজনীয়তার কথা জানানো হয়। তখন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নলকূপের জন্য রাজউকের খালি জায়গা থেকে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। রাজউক ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।
পরে পানির সংকট তীব্র হতে থাকলে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই লেডিস পার্কের পাশে খালি জায়গাটিতে নলকূপ বসানোর অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন সমিতির তৎকালীন সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহিদ হোসেন (অব.)। এক সপ্তাহ পর ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্থানীয় সরকারসচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর তিন মাস পর ১৪ নভেম্বর রাজউক থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানানো হয়, নলকূপের জন্য চাওয়া জায়গাটি রাউজকের নকশায় বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে চিহ্নিত। এটা নিলাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে বরাদ্দ দেওয়া সুযোগ নেই।
কল্যাণ সমিতির বর্তমান নির্বাহী পরিষদ গত ১০ ফেব্রুয়ারি আবার খালি জায়গায় নলকূপ স্থাপনের অনুমতি চেয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় সাংসদ সাহারা খাতুনও তাতে সুপারিশ করেন। কিন্তু এবারও রাজউকের পক্ষ থেকে একই কথায় বলা হচ্ছে।
কল্যাণ সমিতির শিশু ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদা বিলকিস বলেন, পার্কটি নারী ও শিশুদের জন্য খুবই নিরাপদ। ১৩ নম্বর সেক্টর ছাড়াও লেডিস পার্কে ৮, ৯, ১২ ও ১৪ নম্বর সেক্টরের অসংখ্য নারী ও শিশু বিকেলে বেড়াতে আসেন। পার্কটিতে পুরুষ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছেলেদের আড্ডা দেওয়া কিংবা সিগারেট পান করতেও নিরুৎসাহিত করা হয়। এ অবস্থায় পার্কের ভেতরে নলকূপ বসালে এই পরিবেশ আর থাকবে না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাজউকের চেয়ারম্যান আবদুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এরপর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতেও তিনি সাড়া দেননি।