Thank you for trying Sticky AMP!!

গত ৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের পর দেশটিতে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়

লেবাননে সংকট, বিপদে প্রবাসী কর্মীরা

ভয়াবহ এক বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেবাননের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি সেখানে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদেরও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। এমনিতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। এর সঙ্গে যোগ হয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আট হাজার বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফেরার জন্য দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করেছিলেন।


প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত লেবানন থেকে ৫৬৪ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে নারী কর্মী ১২০ জন এবং পুরুষ ৪৪৪ জন। করোনার কারণে গত পাঁচ মাস ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ফিরতে পারেননি।

গত ৪ আগস্ট ব্যাপক মাত্রার একটি বিস্ফোরণে একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় লেবাননের রাজধানী বৈরুত। এতে দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রায় ছয় হাজার মানুষ আহত হয়। সেই সঙ্গে গৃহহীন হয় কয়েক লাখ মানুষ। এই বিস্ফোরণের পর দেশটিতে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।


২৮ বছর আগে পেট্রলপাম্পের হিসাবরক্ষণ কর্মীর কাজ নিয়ে লেবাননে গিয়েছিলেন ফেনীর আজাদ হোসেন ভুঁইয়া। স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে এখন তিনি থাকেন বৈরুত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি মুদিদোকান চালান। লেবাননের পরিস্থিতি সম্পর্কে আজাদ হোসেন গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগেও মার্কিন এক ডলারের সমমান ছিল দেড় হাজার লেবানিজ পাউন্ড বা লিরা (স্থানীয় মুদ্রা)। আর বর্তমান বাজারদর (গতকালের) অনুযায়ী এক ডলার মানে সাড়ে সাত হাজার লেবানিজ পাউন্ড।

আজাদ হোসেন বলেন, লেবাননে যেসব বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন, তাঁদের বেতন গড়ে সাড়ে তিন শ থেকে পাঁচ শ ডলার। স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় তাঁদের গড় আয় এখন এক শ ডলারের কাছাকাছি। গত বছর শুরু হওয়া আর্থিক সংকট এখনো কাটেনি। ফলে জীবননির্বাহের খরচ বেড়েছে। কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। লোকজন তাঁদের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন।


লেবাননের অর্থনীতি মূলত বিদেশে থাকা সে দেশের নাগরিকদের রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) আর পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। অন্তত দুই কোটি লেবানিজ থাকেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। ডলারের দরপতনের কারণে প্রবাসী আয়ে ধাক্কা লেগেছে। আর করোনা সংক্রমণের কারণে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও খাঁ খাঁ করছে পুরো লেবানন।

বৈরুতের একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করেন বাংলাদেশি আশফাক তালুকদার। নিজের ১৭ বছরের অভিজ্ঞতায় এক নতুন লেবাননকে তিনি দেখছেন তিনি। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটনের এই সময়টা আমাদের মতো কর্মীদের জন্য রীতিমতো উৎসব ছিল। দম নেওয়ার ফুরসত পেতাম না। বেতনের চেয়ে উপরিতে পকেট উপচে পড়ত। এখন কোথাও কেউ নেই। আমরা গড়ে আটজন কাজ করতাম রুম সার্ভিসে। এখন আমি ছাড়া মালিক বাকিদের বিদায় দিয়েছেন। আর বাজার তো রীতিমতো আগুন! দুই লিরার এক কেজি বাসমতী কেনা যেত। আর এখন কিনতে হচ্ছে ১০ লিরায়।’

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, লেবাননে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার নারী কর্মী। নারী কর্মীরা বিনা খরচে লেবাননে কাজের জন্য গেলেও পুরুষদের ক্ষেত্রে সোয়া এক লাখ টাকা খরচ হয়। মন্দার আগে দেশটিতে বাংলাদেশের নারী কর্মীদের গড় আয় ছিল আড়াই শ ডলার। নারীরা মূলত গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।


লেবাননের পরিস্থিতি সম্পর্কে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস ধরে ডলারের দরপতন এক জায়গায় থেমে আছে। তবে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এটাই এখানকার প্রধান সমস্যা। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যেসব কর্মী ফিরেছেন, তাঁরা মার্চের আগেই নাম নিবন্ধন করেছেন। যে আট হাজার নাম নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের বাইরে আরও কয়েক হাজার কর্মী দেশে ফিরে যাবেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা।