Thank you for trying Sticky AMP!!

শহর থেকে ধরে জেলায় চালান!

রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকার বিএনপির কর্মী শাহরিয়ার খন্দকারকে গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরের ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। পরদিন পরিবার জানতে পারে, শাহরিয়ার পাবনা সদর থানায়। তাঁর সঙ্গে একই থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় যুবদলের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির কর্মী জুয়েল ইসলামকে।

শাহরিয়ারের ভাই খন্দকার আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কয়েকজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহরিয়ার। হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস এসে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। শাহরিয়ার একজন প্রকৌশলী, ঠিকাদারির কাজ করতেন। আগে কোনো মামলাও ছিল না।

এবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

শুধু শাহরিয়ারই নন, ১০ জুলাই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীতে ধরপাকড় চলছে। এত দিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের মহানগরীর বিভিন্ন নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতো। কিন্তু এখন রাজশাহী শহর থেকে আটক করে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে আশপাশের বিভিন্ন জেলার মামলায়। পুলিশের এই নতুন কৌশলকে বিএনপি ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর পূর্বপ্রস্তুতি মনে করছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সোমবার রাতেই রাজশাহী শহর থেকে বিএনপির ১১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাঁদের পাবনা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন থানায় চালান দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি ৪৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় এবং নির্বাচনী এজেন্ট হতে পারেন এমন নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ ধরনের ধরপাকড় নেতা-কর্মীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্বজনেরাও।

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য জেলা গ্রেপ্তার করলে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সেখানকার কোনো মামলায় হয়তো তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

নির্বাচনের এই সময়ে রাজশাহী নগরের কোথায়, কে, কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, সে বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন পুলিশের রাজশাহী নগর বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার আবু আহমদ আল মামুন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় ১১ জুলাই থেকে নগরীর বিভিন্ন থানায় ২৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির কর্মী মুক্তার হোসেন ভুট্টোকে শহরের বুলনপুর ঘোষপাড়া এলাকা এবং রায়হান আলী ওরফে রানাকে শ্রীরামপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। রায়হানের ভগ্নিপতি জামাল হোসেন জানান, রায়হান চটপটি বিক্রি করেন। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি সক্রিয় ছিলেন। সোমবার রাতে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নেওয়া হয় তাঁকে। পরে জানা যায়, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে আছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার রহমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক শাহ আলমের দাবি, রহমপুর কলেজ মোড় থেকে এ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় একটি বিস্ফোরক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহী শহরের ডাঁসমাড়ি এলাকা থেকে টিপু সুলতান, নতুন বুধপাড়া থেকে মামুনুর রশীদ, মেহেরচণ্ডী থেকে সাবদুল আলী, সাইফুল ইসলাম ও সুলায়মান এবং নামো ভদ্রা এলাকা থেকে মফিজুল ইসলামকে সোমবার রাতে সাদাপোশাকের পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরদিন নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী জালাল উদ্দীন জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় নাটোরের তকিয়া এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর থানার তিনটি নাশকতার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ১১ কর্মীকে রাজশাহী থেকে গ্রেপ্তার করে নাটোরের তিনটি পুরোনো মামলার আসামি করে জেলে পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার নাটোর সদর আমলি আদালত তাঁদের দুজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। অন্যদের জামিনের ব্যাপারে আজ শুনানি হবে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, প্রতিটি মামলার বাদী পুলিশ। আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য গোপনে বৈঠক করার অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের অনেকের নাম নির্বাচনী এজেন্টের তালিকায়ও আছে। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের আগে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য তাঁর কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৪টি মামলায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে চালান দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, গ্রেপ্তারের অভিযোগ তাঁরা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে জানিয়ে দেবেন।