Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষকসংকট, তবু নিয়োগে বাধা

সরকারি প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে ১৬ শিক্ষক বেছে নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে যোগ দিতে গেলে বাধে বিপত্তি। নানা অজুহাতে আটকে যায় তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়া। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমাধ্যমিকের ১৮ জন শিক্ষকের পদে আছে মাত্র তিনজন। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের সাড়ে ৬০০ শিক্ষার্থীকে পাঠদানে হিমশিম অবস্থা কর্তৃপক্ষের। 

১৬ শিক্ষকদের কলেজে যোগদানের শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তাঁদের যোগদান করতে দেওয়া হয়নি। এরপর ছয় মাস ধরে কখনো তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে, কখনো–বা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে ধরনা দিয়েছেন। সমাধান না পেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। 

২০১২ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা (আইইআর) ইনস্টিটিউটে ১৮ শিক্ষককে আত্তীকরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেও ছয় বছর পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। তাঁদের কলেজে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলে সৃষ্টি হয় জটিলতা। ওই ১৮ জন বিষয়টি না মেনে মামলা করেন। মূলত এ কারণে ১৬ জন শিক্ষকের যোগদানের প্রক্রিয়া আটকে আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে। কিন্তু জটিলতার সমাধান না করার আগেই কলেজে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী আছে প্রায় দুই হাজার। উচ্চমাধ্যমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখায় সব মিলিয়ে শিক্ষক আছেন প্রায় ৫৩ জন। 

বর্তমানে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক আছেন তিনজন। অন্যদিকে শিক্ষার্থী আছেন সাড়ে ছয় শ জন। এই তিন শিক্ষকের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার শিক্ষকেরা। ফলে শিক্ষকসংকট নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। 

সার্বিক বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে কোনো শিক্ষক ছিলেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এনটিআরসিএতে শিক্ষকের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এই কলেজের শিক্ষক নিয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। মামলা নিষ্পত্তি হলে সরকারি প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক। কারণ, প্রচলিত নিয়োগের চেয়ে নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগ অনেক বেশি স্বচ্ছ। তবে এই জটিলতার বিষয়ে সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শিরীণ আখতার প্রথম আলোকে বলেন, আইইআর নিয়ে ১৮ শিক্ষকের একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মূলত এই কারণেই এনটিআরসিএ থেকে আসা ১৬ শিক্ষক যোগদান করতে পারছেন না। তবে মামলা নিষ্পত্তি হলে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এদিকে এসব শিক্ষকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। সভায় এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়া ১৬ কলেজশিক্ষককে নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্তীকরণ নিয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। 

এর মধ্যে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে কোনো আইনি বাধা আছে কি না তা আইন উপদেষ্টার কাছ থেকে জানা হবে।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের গোপনীয় শাখার উপ–রেজিস্ট্রার শামসুল আলমকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সভার পাঁচ মাস পার হলেও আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেননি তিনি। শামসুল আলমের দাবি, সময়মতো আদেশের চিঠি না পাওয়ায় আইনি পরামর্শ নিতে পারেননি তিনি। 

নিয়োগ পাওয়া পাঁচ শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগ দিতে না পারায় তাঁরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন বলে জানিয়েছেন। সাইফুল ইসলাম নামের একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বারবার যোগাযোগ করেও যোগদান করতে পারেননি। কর্তৃপক্ষ বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিয়ে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে বলে অজুহাত দেখিয়েছে। কিন্তু এ রকম সমস্যা থাকলে কর্তৃপক্ষ কেন এনটিআরসিএতে শিক্ষকের চাহিদাপত্র পাঠাল। আর আমাদেরও–বা কেন বিপদে ফেলল?’