Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষক মোর্শেদ হাসানের চাকরিচ্যুতি প্রত্যাহার চায় ছাত্র ইউনিয়ন

মোর্শেদ হাসান

সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খানের চাকরিচ্যুতি প্রত্যাহার চায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।


আজ শুক্রবার সকালে যৌথ বিবৃতিতে অধ্যাপক মোর্শেদের চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ ও সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বৈঠকে মার্কেটিং বিভাগের এই অধ্যাপককে স্থায়ী অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের নেতা।

বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা বলেন, ‘অধ্যাপক মোর্শেদ যে বিষয়ে মতপ্রকাশ করেছিলেন, তা বিতর্কিত। তাঁর মন্তব্য অনেকাংশে মিথ্যা বলে প্রমাণিত। এ জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করে বক্তব্য প্রত্যাহারও করেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। একজন শিক্ষক রাষ্ট্রীয় একটি বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশ করবেন, একজন নাগরিক মত প্রকাশ করবেন, এটি তাঁর অধিকার। একটি মতকে কেবল আরেকটি মত দিয়েই অবদমন করা যেতে পারে। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন চরিত্রের বিরোধী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্টতই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে গেড়ে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দালালি করছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একাডেমিক ফ্রিডম বলতে কোনো কিছু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমনিতেই নেই। যেটুকু আছে, সেটিও মুছে দিতে এই সিদ্ধান্তের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইনের ধারায় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেটি তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ-১৯৭৩-এর ৫৬(২) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তার রাজনীতি করার তথা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। ৫৬(৩) ধারা অনুযায়ী একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা যাবে, কেবল যদি তিনি নৈতিক স্খলন কিংবা দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অধ্যাপক মোর্শেদ এই দুই অভিযোগের কোনোটিতেই অভিযুক্ত হননি। অর্থাৎ, এই চাকরিচ্যুতি কেবল মতপ্রকাশের জন্যই। মতপ্রকাশের দায়ে একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার এই সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে।’

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চাকরিচ্যুতির এই আদেশ কার্যকর হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রকে পুরোপুরি বিনষ্ট করে দিতে অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে। স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর ঝুলিয়ে দেওয়া এই খাঁড়া পরবর্তী যেকোনো গবেষক-শিক্ষক-ছাত্রের ওপরই নেমে আসতে পারে। অধ্যাপক মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করার এই আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্রদের পূর্ণ একাডেমিক ফ্রিডম নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দালালি ছেড়ে সত্যিকার স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতো আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় একটি দৈনিকে ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক’ বলে দাবি করেন। তিনি লেখেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, এমনকি বঙ্গবন্ধুও।’
সে বছরের ২ এপ্রিল ইতিহাসবিকৃতির অভিযোগে এই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ৫ এপ্রিল স্বেচ্ছায় পদত্যাগে অধ্যাপক মোর্শেদকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণাও করেছিল সংগঠনটি। এমন পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি লেখাটি উইথড্র করে নিয়েছি। সংবাদপত্রটিও তাদের লেখা সরিয়ে নিয়েছে। লেখাটি অনেককে ব্যথিত করেছে। আমি তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’ পরে গত বুধবারের সিন্ডিকেট সভায় তাঁকে শিক্ষকতার চাকরি থেকে স্থায়ী অব্যাহতি দেওয়া হয়।