Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশু কোলেই সবার পাশে ছুটে যাচ্ছেন যে মা

ছবি : সংগৃহীত

করোনাকালে দুর্গত মানুষের কাছে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি হচ্ছে সহায়তার হাত। অনেকেই ভাইরাসটি সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই ছুটে যাচ্ছেন মানুষের পাশে। তেমনি একজন কর্মজীবী নারী হালিমা আহমেদ।

হালিমা আহমেদ খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্য পরির্দশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তারে দেশে খাদ্য সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অনেক অসহায় মানুষ। দরিদ্র মানুষ সরকারের কম মূল্যের চাল–ডাল পাচ্ছে কি না, বাজার পরিস্থিতি, নির্ধারিত সময়ের পর দোকানপাট খোলা রাখা হচ্ছে কি না, এ ধরনের অনেক কাজ করতে হচ্ছে খাদ্য পরিদর্শকদের। হালিমা আহমেদও করছেন।

সমস্যা হলো, আড়াই বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে।এই সময়ে তাকে বাসায় রেখে আসারও উপায় নেই। কে দেখবে? অন্যদিকে সন্তান নিয়ে বের হয়েও সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে—প্রাণঘাতী ভাইরাস কোলের এ শিশুটিকে স্পর্শ করে কি না।

আজ বুধবার টেলিফোনে কথা হয় হালিমা আহমেদের সঙ্গে। জানালেন, গত দুই বছর ধরে তিনি কেরানিগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৩ মার্চ থেকে তিনি কেরানিগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নে কাজ করছেন। ইউনিয়নের বাজার পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কাজ করেন সন্তান কোলে নিয়ে। এ ছাড়া উপায়ও নেই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে হালিমা একা রেখে আসেন। এই মেয়ে নিজেকেই সামলাতে পারে না, তাই ছোটটিকে রেখে আসা সম্ভব হয় না। বাসায় কাজের লোকও নেই। কেরানীগঞ্জে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করেন। তবে বর্তমানে ভাইরাসের বিস্তারে বিষয়টি উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।

হালিমা জানালেন, তাঁর স্বামী বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত। জাতিসংঘ শিশু তহবিল–ইউনিসেফের একটি প্রকল্পে কাজ করছেন। দুপুরে স্বামীকে প্রতিদিনই কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। স্বামীর কাজের সূত্রে একটি গাড়ি পেয়েছেন, ভাইরাসের বিস্তারের আগে ওই গাড়ি দিয়ে হালিমা আহমেদকে কর্মক্ষেত্রে নামিয়ে দিতেন। তবে ভাইরাসের বিস্তারে ওই গাড়ির চালক এখন ছুটিতে। এতে স্বামী এখন মোটরবাইকে করে সন্তানসহ হালিমাকে আনা–নেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন।

কেরানীগঞ্জের মূল কার্যালয় থেকে কলাতিয়া বেশ দূরে। যাতায়াত সমস্যার কারণে স্বামী দুপুর পর্যন্ত থেকে হালিমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে পরে নিজের অফিসে যাচ্ছেন।

হালিমা বললেন,'আমি কর্তৃপক্ষকে আমার সমস্যার কথা জানিয়েছি। আমি প্রতিদিন বাচ্চা কোলে নিয়ে কাজ করছি তা আমার কর্তৃপক্ষ অবগত। দীর্ঘক্ষণ বাচ্চা বাইরে থাকায় বিরক্তও করে। সব মিলিয়ে কাজ করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মোহাম্মদপুর বা যাতায়াত সুবিধা আছে, এমন কোনো জায়গায় বদলি করলে আমার দুর্ভোগটা একটু হলেও কমত। এখন আমার সহকর্মীরা আমাকে কাজে সার্বিক সহায়তা করছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে থাকারও উপায় নেই, চাকরিও করতে হবে।'

খাদ্য অধিদপ্তরের কেরানীগঞ্জের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নজর আলীর সঙ্গে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা হয়। তিনি বললেন, হালিমা আহমেদ বাচ্চাকে কেন বাসায় রেখে আসেন না। তারপর বলেন, হালিমা আহমেদের নিজস্ব গাড়ি আছে বলেই তাঁকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের এ সময় বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে কি না, জানতে চাইলে নজর আলী প্রথম আলোকে বলেন, 'ইউএনও স্যার, ডাক্তার, আমি, আপনি সবাই তো ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি। কেউ তো আর তাঁর দায়িত্ব পালন করা বাদ দেয়নি। সবাইতো ঝুঁকির মধ্যেই আছি।'

নিজস্ব গাড়ি থাকা প্রসঙ্গে হালিমা আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁর কখনোই নিজস্ব গাড়ি ছিল না। স্বামীর গাড়ি ব্যবহার করা এবং বর্তমানে ওই গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই, তাও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।