Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলে কী করবেন

তানহা তাবাসসুমের বয়স দেড় বছর। দুদিন ধরে তার গায়ে জ্বর। এ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন তার বাবা আরাফাত রহমান ও মা আছমা খাতুন। এই দম্পতি থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি সিদ্ধান্তে ঘরেই থাকছেন তাঁরা।

চার দিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করার জন্য ঘরে অবস্থান করছে। এই সময় কেউ যদি জ্বর, সর্দি কিংবা কাশিতে আক্রান্ত হয়, তখন পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত হয়ে পড়ছেন। ভয় পাচ্ছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না? আর শিশু যদি সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে তো মা–বাবার চিন্তার শেষ নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে কী করবেন বাবা-মা?

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা পৃথিবীর আলোচিত একটা বিষয় করোনাভাইরাস। সরকার বলছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে। শিশুরা একটু ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, সর্দিতে আক্রান্ত হলেও এই সময়ে তাদের ঘরে রাখাই ভালো। আমরা অভিভাবকদের বলতে চাই, আপনারা ঘরে অবশ্যই একটা থার্মোমিটার রাখবেন। জ্বরে আক্রান্ত হলে শিশুর জ্বরটা মাপুন। আপনারা প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আবার অনেক সময় শিশুদের অনেক জ্বর হয়। হাইফিভার হলে আমরা শিশুদের সাপোজিটরও রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। যেসব পরিবারে শিশু আছে, অবশ্যই প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ ঘরে রাখুন এবং সাপোজিটরও রাখুন। সাপোজিটর রাখবেন ফ্রিজের নরমাল অংশে। অনেক সময় শিশুর জ্বর ঘুমের মধ্যেও আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনারা সাপোজিটর ব্যবহার করতে পারেন।’

করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসক খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর, শরীর ব্যথা হয়। এই সময়ে আপনার শিশু যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের তিন থেকে চার দিন ঘরেই রাখুন। প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ যেমন সর্দির জন্য হিস্টাসিন, ফেক্সো ফেনানিন ব্যবহার করতে পারেন।’

মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক খন্দকার কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শিশুদেরও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এই সময়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে, সে জন্য তাদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয়, তাহলে মা যেন বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খান। শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ পান করাবেন। আর শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার সঙ্গে দেবেন। শিশুদের এই সময়ে খিচুড়ি, আলু ও ডিমের কুসুম খাওয়ানো যেতে পারে।’

পরিবারের কোনো সদস্য যদি সর্দি–জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে অবশ্যই শিশুকে ওই লোকের কাছ থেকে দূরে রাখতে বলেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ঘরে যদি কোনো সদস্যের ঠান্ডা, কাশি জ্বর লেগে থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি থেকে শিশুকে আলাদা রাখব।’

কখন শিশুকে হাসপাতালে আনবেন, সে ব্যাপারে কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন দেখব শিশুর খুবই জ্বর, ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে, যেটাকে আমরা নিউমোনিয়া বলি। এই সময়ে শিশুর বুক ও পেটের মাঝখানের অংশ যদি কোনো সময় দেবে যায়, সে ক্ষেত্রে আমরা শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে আসব।’

বয়স্কদের কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখার পরামর্শ দিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি জীবাণু ঢোকার আগে আমাদের শরীর তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তারপরও শিশুরা ভালনারেবল (ঝুঁকিপূর্ণ) গ্রুপে। বয়স্করা তো অবশ্যই ভালনারেবল। বয়স্কদের ডায়াবেটিস থাকতে পারে, তাঁদের ফুসফুসে ব্রঙ্কালি অ্যাজমা থাকতে পারে, নিউমোনিয়া থাকতে পারে। অনেক প্রকারের ডিজিজ (রোগ) থাকতে পারে বয়স্কদের। তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে বয়স্ক মানুষ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। কারণ, শিশুরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে। আমরা সব সময় চেষ্টা করব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার। কাশি দিলে যেন মুখটা ঢেকে রাখি। খাওয়ার আগে, খাওয়ার পরে আমরা যেন হাতটা সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করি।’