Thank you for trying Sticky AMP!!

শুধুই মাছের মেলা নয়

কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামে মেলায় মাছ হাতে এক িবক্রেতা

ঐতিহ্যের মাছের মেলা। এখানে শুধুই মাছ কেনার বিষয় নয়, আছে একধরনের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা জামাইদের। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ আছে শ্বশুরদেরও। ব্যতিক্রমী এই মেলার আয়োজনস্থল গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রাম।

গতকাল রোববার সকাল থেকে মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে চলে দিনব্যাপী আনন্দ-উৎসব। বিনিরাইল ও এর আশপাশের গ্রামে যাঁরা বিয়ে করেছেন, সে জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। তা ছাড়া মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুরদের মধ্যেও চলে নীরব প্রতিযোগিতা।

এলাকাবাসী জানান, গতকাল ওই বাজারে ৪০ কেজি ওজনের একটা কাতলা মাছ ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৬৫ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় চুপাইর এলাকার জামাই নুরুল ইসলাম মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর-কষাকষি। যত না ক্রেতা, তার চেয়ে বেশি উৎসুক মানুষ ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য। পৌষের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিন গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার জামালপুর, মোক্তারপুর ও জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় এমন দৃশ্যই দেখা গেল।

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই, এর বাইরে থেকে অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ শুধু এই মেলার জন্যই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। এবারের মেলায় তিন শতাধিক ব্যবসায়ী বাহারি মাছ সাজিয়ে বসেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। সামুদ্রিক চিতল, বাগাড়, আইড়, বোয়াল, কালবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রুপচাঁদার পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকম দেশি মাছও।

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষসংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো।

মেলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী নয়ন কুমার দাস জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এই মেলায় দোকান করেন। জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলাম বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সব জামাইয়ের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সে অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকা হয়।

মেলা সম্পর্কে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে বহন করছে, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’