Thank you for trying Sticky AMP!!

শুভ জন্মদিন, হুমায়ূন আহমেদ!

নিষাদ আর এখন গান গায় না। কেন গায় না? ‘বয়স হয়ে গেছে তো, গলাটা আর আগের মতো নেই’—নিষাদের সপ্রতিভ জবাব।

তা বটে! নিষাদ হুমায়ূনের বয়স ১১ বছর। গানে মনোযোগ কমিয়ে সে এখন বেশি বেশি ছবি আঁকে। নিষাদের ৭ বছর বয়সী অনুজ নিনিত আরও বড় দার্শনিক! সে যে ঠিক কী করতে ভালোবাসে তা বলে বোঝাতেই পারল না। বলল, ‘কখনো ছবি আঁকি, কখনো গেমস খেলি, কখনো নিজেরা একটা খেলা বানিয়ে খেলি। ঠিক জানি না, কোনটা বেশি ভালো লাগে।’

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আমরা গিয়েছিলাম ধানমন্ডির দখিন হাওয়ায়। যেখানে হুমায়ূন আহমেদ থাকতেন। আজ জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের ৭০তম জন্মবার্ষিকী।

বাবাকে আঁকার জন্য বিশাল আয়োজন করে বসেছিল নিষাদ-নিনিত। দরজা খুলে দিতেই নিষাদের দেখা, তার পেছনে নিনিত। দুজনের পরনেই গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবি। নিষাদ বলল, ‘এক মিনিট, আমরা বর্ডারগুলো এঁকে নিই?’

হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮-১৯ জুলাই, ২০১২)। ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

কাগজে বর্ডার আঁকা হলে আমাদের ঘরে ঢোকার অনুমতি মিলল। নিচু একটা টেবিলে বড় ক্যানভাসে দুই ভাই বাবাকে আঁকতে শুরু করেছে। ওদের মনের ক্যানভাসের ছবিগুলো পড়ার চেষ্টা করি আমরা। ওদের বলি, ‘কাল (আজ) তো বাবার (হুমায়ূন আহমেদ) জন্মদিন।’

নিনিতের মুখে বিচিত্র একটা হাসি, ‘হ্যাঁ, অনেক মজা। কাল স্কুলেও যেতে হবে না। তবে আমি কিন্তু এক দিনও ক্লাস মিস দিইনি।’ নিনিত পড়ে প্রথম শ্রেণিতে, সানবিমস স্কুলে। নিষাদও একই স্কুলে, চতুর্থ শ্রেণিতে।

আগে খেয়াল করিনি, ড্রয়িংরুমের এক কোণে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো বসে ছিল। নিনিত ওটার সামনে গিয়ে বসে বাজাতে শুরু করল। ‘হ্যাপি বার্থডে’র টুংটাং সুরটা ছড়িয়ে পড়ল ফ্ল্যাটের আনাচেকানাচে। ঠিক পাশেই ফ্রেমে বাঁধা হুমায়ূন আহমেদের একটা ছবি।

নিনিত এরপর নিয়ে গেল ওদের থাকার ঘরে। দুই তলা বিছানা। পড়ার টেবিল। খেলনার বাক্স। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বই। নিনিতকে বললাম, ‘তোমাকে নিয়ে তো বাবা একটা বই লিখেছিলেন—রাজার পুত্র নিনিত। সেই বইয়ে লেখা আছে, তুমি খুব সাহসী। আসলেই কি সাহসী?’

বাবার জন্মদিনে বাবাকেই অাঁকছে নিনিত হুমায়ূন (বাঁয়ে), নিষাদ হুমায়ূন। ছবি: খালেদ সরকার

নিনিত বিছানার দোতলায় উঠে বলল, ‘আমার অনেক সাহস।’ পাশ থেকে ফোড়ন কাটল নিষাদ, ‘কিন্তু দেবী মুভিটা দেখতে গিয়ে ও ভয় পেয়েছিল! মুভিটার কিছু জায়গা অবশ্য ভয়ংকর!’ হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ বইয়ে লিখেছিলেন, ‘পুত্র নিষাদ “ভয়ংকর” বলতে পারে না। সে বলে “ভয়মকর”।’ নিষাদ এখন বড় হয়েছে, সে এখন ভয়ংকর বলতে পারে!

বড় ভাইয়ের মুখে জারিজুরি ফাঁস হওয়ায় লাজুক মুখে নিনিত বলল, ‘এ কারণেই তো মুভিটাকে দশে আট নম্বর দিয়েছি।’ আর নিষাদ কত দিয়েছে? ‘ভয়ের সিনেমা তার খুব প্রিয়। তাই দশে দশ দিয়েছে।’

নিষাদ-নিনিতের ছবিটা ততক্ষণে অনেকটাই আঁকা হয়ে গেছে। শুভ জন্মদিন, হুমায়ূন আহমেদ!