Thank you for trying Sticky AMP!!

শ্রীপুরে নির্বাচন স্থগিত

শ্রীপুরে অস্ত্রবাজি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও একজন নিহত হওয়ার পর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ১৫ মার্চ এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরাও।
এদিকে সোমবার রাতে শ্রীপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ও তাঁর ভাই সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনের বাবা। একই রাতে ইকবাল হোসেনের বদলে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল জলিলকেই সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দলের সমর্থন পাওয়ার পরপরই নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ বলে মনে করেন আবদুল জলিল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক। এতে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শ্রীপুরের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মোতালেব সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে বুঝতে পেরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচন স্থগিত করেছে।
হত্যা মামলা: শ্রীপুর উপজেলার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত শনিবার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগ নেতা আল আমিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আবুল হোসেন সোমবার রাতে শ্রীপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও গাজীপুর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে। তাঁর ভাই সাখাওয়াত হোসেনকে করা হয়েছে দুই নম্বর আসামি। সাখাওয়াতই গাড়ি থেকে গুলি করে আল আমিনকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই দুজন ছাড়াও শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান, তাঁর ভাই হাফিজুর রহমানসহ ৩৫ জনের নাম রয়েছে মামলায়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৬০-৭০ জনকে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আল আমীনকে পাকড়াও করে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে নর্দমায় ফেলে দেয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।’

সমর্থন বদল: তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাদের সমর্থন পেয়েছিলেন আবদুল জলিল। কিন্তু জেলা নেতারা ইকবালকে সমর্থন দেন। এরপর জলিলকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। একপর্যায়ে গত শুক্রবার র‌্যাব তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
র‌্যাবের এই অভিযানের পর শ্রীপুর অশান্ত হয়ে ওঠে। এর জের ধরে শনিবার ইকবাল হোসেন শ্রীপুরে এলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বাঁধা দেন এবং দুই পক্ষে তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রোববার মারা যান আল আমিন।
এ হত্যাকাণ্ডের পর পাল্টে যায় চিত্র। সোমবার রাতে জলিলকেই সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। জলিল প্রথম আলোকে জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান তাঁকে সোমবার রাতে দলের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
জানতে চাইলে আজমত উল্লাহ বলেন, দলের বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কালিয়াকৈরেও প্রার্থী পরিবর্তন: কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেজাউল করিম ওরফে রাসেলকে সমর্থন দিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শ্রীপুরে সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাতে প্রার্থী পরিবর্তন করে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদারকে নতুন করে সমর্থন দেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি সন্ধ্যায় কেন্দ্র থেকে আমাদের জানানো হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কামাল উদ্দিন সিকদারকে দল-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’