Thank you for trying Sticky AMP!!

সংকটই কলেজটির সঙ্গী

জামালপুর জেলার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ। এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ হাজার ২১০ জন। কিন্তু শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক অনেক কম। কলেজটিতে শিক্ষকদের সৃষ্ট পদ আছে ৭০টি। বর্তমানে শিক্ষক আছেন ৬১ জন। এই হিসাবে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ২১৬। কলেজটি সরকারি হওয়ার পর ৪১ বছরেও পুরোনো বিষয়ে শিক্ষকের কোনো পদই সৃষ্টি হয়নি।

শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষার্থী ও বিভাগ অনুযায়ী নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। আছে শিক্ষার্থীদের আবাসন–সংকট। আবার যাতায়াতের জন্য নেই কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা। এসব নানা সংকটে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

অবশ্য এই সংকটের মধ্যেও কলেজের পরীক্ষার ফল মোটামুটি ভালো। ২০১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞানে পাসের হার ছিল ৯১ শতাংশ, মানবিকে ৭৪ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া স্নাতকে ৭২ শতাংশ ও স্নাতকোত্তরে পাসের হার ৭৩ শতাংশ।

৪৩ একর জমির ওপর ১৯৪৬ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটি ১৯৭৯ সালে সরকারি হয়। এ কলেজে ৮ হাজার ২১৮ জন ছাত্র ও ৪ হাজার ৯৯২ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। কলেজটিতে ১৪টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ১২টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। প্রশাসনিক সংস্কার–সংক্রান্ত এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যেসব বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়, সেগুলোর প্রতিটিতে কমপক্ষে ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু কোনো বিভাগেই ১২ জন করে শিক্ষক নেই।

স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তা খাতুন বললেন, তাঁদের কলেজে শিক্ষকসংকট প্রকট। এ কারণে একজন শিক্ষক একটি ক্লাসে পড়িয়ে কোনো রকম বিশ্রাম ছাড়াই আরেকটি ক্লাসে যাচ্ছেন। কিন্তু এর ফলে ওই ক্লাসে খুব মনোযোগ থাকে না শিক্ষকের। 

শিক্ষকসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার কথা কলেজের অধ্যক্ষ মুজাহিদ বিল্লাহ্ ফারুকীর কথা থেকেও বেরিয়ে এল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়টি বাধ্যতামূলক হলেও এখনো এ বিষয়ে শিক্ষক পদায়ন হয়নি। অন্য বিষয়ের দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কলেজে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট। ফলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সাল থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তির আসনসংখ্যা কমানো হয়েছে। এতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হয়েছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও প্রিলিমিনারি কোর্স চালু আছে। যে কারণে স্বল্পসংখ্যক শিক্ষককে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কলেজে একটি ল্যাবরেটরি থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। বিজ্ঞানাগারে নেই সেই ধরনের প্রয়োজনীয় উপকরণ। তাঁদের আশা, স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও অবকাঠামোগত সংকট দূর হবে। 

শ্রেণিকক্ষসহ অবকাঠামোর সমস্যা

গত রোববার সরেজমিনে জানা গেছে, পুরো ক্যাম্পাসে ৪টি একাডেমিক ভবন ও ৩৪টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশই জরাজীর্ণ। বিজ্ঞান বিভাগের পুরো ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও দর্শন বিভাগের পরীক্ষার হলগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ওই সব হল এখন ব্যবহার করা হয় না।

স্নাতক (সম্মান) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, অনেক পুরোনো জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে হয়। ওই সব ক্লাসে শিক্ষার তেমন কোনো পরিবেশ নেই। আবার শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। কলেজে একটি ছাত্রীনিবাস এবং একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এগুলোর একেকটিতে ১৫০ জন করে থাকার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেগুলোর অবস্থাও এখন জরাজীর্ণ। নতুন একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হলেও ফটক নির্মাণ না করায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না।

আবাসন–সংকটের মধ্যে আবার পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্নাতক (সম্মান) অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোহাইমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বললেন, ‘কলেজে কোনো বাস নেই। দূরদূরান্ত থেকে আসা-যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়। আবার পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মেসে থাকতে হয়। এতে খরচ বেশি হয়।’