সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা, আটক ৩৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে সরকারি চাকরির কোটাবিরোধীদের সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার শাহবাগে কোটাবিরোধীদের জমায়েত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ও ধরপাকড়ের ভয়ে তাঁরা আসতে পারেননি। পুলিশ গতকাল ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ জনকে আটক করেছে।
অন্যদিকে বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলনের দুই দিন পর এবার কোটা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ দাবিতে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামে দুটি সংগঠন।
মামলা ও গ্রেপ্তার: শাহবাগ থানার পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার পুলিশের ওপর হামলা, দায়িত্ব পালনে বাধা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল রউফ বাদী হয়ে রাতে একটি মামলা করেন।
মামলায় হাফিজুর রহমান, মির্জা তৌহিদুল ইসলাম, শিকদার দিদারুল ইসলাম, মতিউর রহমান, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, জুনায়েদ, নুরুল হুদা, রায়হান কাউসার ও মোহাম্মদ আরিফ হোসেনকে আসামি করা হয়। তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই নয়জনকে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম।
এ ছাড়া কোটাপ্রথা বাতিল ও ৩৪তম বিসিএসের ফলাফল বাতিল করে পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে নামা আন্দোলনকারীদের মধ্যে আরও অন্তত ৩৩ জনকে গতকাল আটক করা হয়েছে। রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান প্রথম আলোকে জানান, এঁদের মধ্যে নির্দোষ কেউ থাকলে যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে গতকাল বেলা তিনটার দিকে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে তাঁরা আর দাঁড়াতে পারেননি। দুপুরে আন্দোলনকারীরা এক জোট হয়ে কার্জন হল এলাকা থেকে শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের কর্মীদের বাধার মুখে পড়েন। এ ছাড়া শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, টিএসসি চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, বুয়েটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আন্দোলনকারীরা মিছিল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে তাঁরা তা করতে পারেননি।
বিকেলে শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। পলাশী, টিএসসিসহ বিভিন্ন এলাকায়ও পুলিশের টহল ছিল।
গত সোমবার ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তা নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে বুধবারই ওই ফল পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। কিন্তু সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। শাহবাগ অবরোধের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েন এবং দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবন ও কার্যালয়, প্রক্টর কার্যালয়, সমাজবিজ্ঞান ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।
শাহবাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তাঁরা অবিলম্বে ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল বাতিল করে পুনর্মূল্যায়ন চান। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে সবার নম্বর এবং সঠিক উত্তর দিতে হবে। বাতিল করতে হবে বিসিএসসহ সব পরীক্ষার কোটাপ্রথা।
কোটা রক্ষায় আন্দোলন: বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের আন্দোলনের দুই দিন পর এবার কোটা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এ দাবিতে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামে দুটি সংগঠন। কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ উল্লেখ করে এ সময় সংগঠন দুটির নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, শিবিরের পাতানো ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৩০ ভাগ এই কোটা কারও করুণা নয়। সংগঠনটির সভাপতি হুমায়ুন কবির বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন
-
স্কুল, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
আগামীকালও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
মিয়ানমারে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন