Thank you for trying Sticky AMP!!

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন করার প্রস্তাব জি এম কাদেরের

জি এম কাদের। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, সংসদ সদস্যরা নিজের বিবেক, বিচারবুদ্ধি ও এলাকার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না। এ জন্য তিনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন করার প্রস্তাব করেছেন।

আজ রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জি এম কাদের এ প্রস্তাব করেন।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো সাংসদ সংসদে তাঁর দলের বিপক্ষে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ হারাতে হয়। এ বিষয়টি উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতিতে মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়া বাকিরা সবাই বেসরকারি সদস্য। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতেও এটি আছে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়া বাকি সব সদস্যের সমন্বয়ে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে সংসদে ভূমিকা রাখেন। মন্ত্রী বাদে সরকারি ও বিরোধী দলের সব সদস্য একক ও যৌথভাবে এ দায়িত্ব পালন করলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেতে পারে। কিন্তু সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এখানে বাধার সৃষ্টি করছে। ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সরকারি দলের সব প্রস্তাবই সংসদে গ্রহণ করা হয়।

জি এম কাদের বলেন, সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক কর্তৃত্ব দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাংসদদের ভূমিকা গৌণ ও পরামর্শমূলক। সংসদ সদস্য নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নন। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হ্যাঁ–সূচক সম্মতি হচ্ছে তাঁর কাজ। সংবিধানে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়ন অসম্ভব।
তবে দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে ৭০ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণ বাদ দেওয়াও বাস্তবসন্মত নয় বলে মনে করেন জি এম কাদের। তিনি সরকার গঠন, বাজেট অনুমোদন ও অনাস্থা প্রস্তাব—শুধু এই তিনটি ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, এতে সংসদ আরও বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর হবে।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশে গণতন্ত্রায়ন নির্বাচনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা।’

সব দলকে নিয়ে বসার আহ্বান
মানুষ কেন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে—সে বিষয়টি চিন্তা করার আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। নির্বাচনকে অর্থবহ করতে সব দলকে নিয়ে একসঙ্গে বসার আহ্বানও জানান তিনি।
আনিসুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের মূল কথা। মানুষের কাছে নির্বাচন স্বচ্ছ করা না গেলে, আস্থা অর্জন করা না গলে গণতান্ত্রিক সরকার হবে না। নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য সব দলের বসা উচিত। অবিশ্বাস, আস্থার অভাব মেটানো দরকার। নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে রপ্তানি, জনশক্তি রপ্তানি এবং সরকারি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ সচল রাখতে হবে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জাপার এই সাংসদ বলেন, অনেক দেশের উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু হঠাৎ ধসে গেছে। উন্নয়ন টেকসই করতে প্রাতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন—মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংসদের ভূমিকা আছে—এটা মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে। সংসদে আইন পাস হচ্ছে। কিন্তু সংসদে এসে আইন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কীভাবে সংসদকে আরও প্রাণবন্ত করা যায় ভাবতে হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির নিবেদন
বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ‘সবিনয় নিবেদন’ জানান বিএনপির সাংসদ জাহিদুর রহমান। তিনি বলনে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত। বিশেষায়িত হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা দরকার। মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে সুচিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার নিবেদন জানান বিএনপির এই সাংসদ।
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন উল্লেখ করে জাহিদুর রহমান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না। নির্বাচনের আগে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কীভাবে মুক্তি?
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কীভাবে সরকার মুক্তি দেয়? তিনি অসুস্থ থাকলে চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। দেশের শ্রেষ্ঠ জায়গায় তাঁর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি আবেদন করছে মুখে মুখে। একমাত্র আদালত মুক্তি দিতে পারেন। অথবা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন।

শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকলমুক্ত পরিবেশে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার আগে যেন অনৈতিক কোনো কিছু দিয়ে কলুষিত করার পথে শিক্ষার্থীদের সহায়তা না করেন, সে জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি আশা করেন, আগামী বছর থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করা যাবে।

দীপু মনি বলেন, প্রতিবছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। এবারও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী হয়েছে। এখানে হস্তক্ষেপ বা রাজনৈতিক বিবেচনার সুযোগ ছিল না।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ এমাজউদ্দীন প্রামাণিক, এ বি তাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।