Thank you for trying Sticky AMP!!

সংযোগ বন্ধ, তবু বাড়ছে গ্যাসের গ্রাহক ও ব্যবহার

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পূর্ব চান্দরায় অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ চলছে। ফাইল ছবি

প্রায় সাত বছর ধরে সব শ্রেণির গ্রাহককে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া পুরোনো গ্রাহকদের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানোর (লোড বৃদ্ধি) অনুমতি দেওয়াও বন্ধ। এরপরও প্রতিবছর গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে গ্যাসের ব্যবহার।

জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, অনিয়ম-দুর্নীতিই এ অবস্থার জন্য দায়ী। জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলা এবং দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এই অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্রও স্পষ্ট।

বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত গ্যাসের ৬০ শতাংশের বেশি বিতরণ করে তিতাস। ঢাকাসহ দেশের ১২টি জেলা এবং অধিকাংশ গ্রাহক এই কোম্পানির আওতাধীন। কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত তাদের আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৬ হাজার ১৩। ২০১৭ সালের জুনে তা বেড়ে হয়েছে ২৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৩৬। অর্থাৎ এক বছরেই গ্রাহক বেড়েছে ৭ লাখের বেশি, যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩৫। এই হারে এর আগে আর কখনো আবাসিক খাতে গ্রাহক বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।

সরকার ২০১০ সালের মধ্যভাগ থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে এবং ওই বছরের শেষ ভাগে আবাসিক খাতে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ রাখে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় সরবরাহ–স্বল্পতাই ছিল এর কারণ। কিন্তু তখন থেকে, বিশেষ করে আবাসিক খাতে ব্যাপকভাবে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হতে থাকে। এ অবস্থায় একবার নির্দিষ্ট সময় দিয়ে আবাসিক খাতের অবৈধ সংযোগ বৈধ করার জন্য সংযোগ বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর আবার তা বন্ধ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।

কিন্তু শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে ২০১০ সালে বন্ধ করার পর আর নতুন সংযোগ চালু করা হয়নি। তবে এই খাতে বিশেষ ক্ষেত্রে, জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় কোনো সংযোগ দেওয়ার জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করা হয়। অনেক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এই কমিটির কাছে আবেদন করে হাজার খানেক নতুন সংযোগ ও লোড বৃদ্ধির অনুমোদন পেয়েছে।

এ কারণে যেটুকু চাহিদা বাড়ার কথা, বেড়েছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। পেট্রোবাংলার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জ্বালানিসচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা ছাড়া গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেওয়া-নেওয়া সম্ভব নয়। তাই সব কোম্পানিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে যে কোম্পানির এলাকায় অবৈধ সংযোগ কিংবা অনিয়ম পাওয়া যাবে, সেই কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচিব বলেন, জ্বালানি খাত একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। তারপরও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

সংযোগ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও এত গ্রাহক বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিতাসের সূত্রগুলোর দাবি, তথ্য হালনাগাদ করার কারণে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কোম্পানির আইটি ব্যবস্থা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে কোম্পানির আবাসিক গ্রাহকদের তথ্যভান্ডার হালনাগাদ করা হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে। তিতাসের ২৬টি আঞ্চলিক কার্যালয়। আগে এর সব কটি কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব ছিল।

তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইটি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করলে গ্রাহকসংখ্যা লাফ দিয়ে বাড়বে, অন্যথায় গ্রাহকসংখ্যা কম থাকবে—এটা কোনোভাবে হতে পারে না। আসলে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অবৈধ গ্রাহকদের বৈধ করে নেওয়া হচ্ছে। আবার অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতির এই চক্র গ্যাস খাতকে ডুবাচ্ছে। আর তা ভাসিয়ে রাখার জন্য সরকার সাধারণ গ্রাহকদের ঘাড়ে বাড়তি দামের বোঝা চাপাতে চাইছে।

সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, তিতাসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) এ রকম একাধিক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।