Thank you for trying Sticky AMP!!

সকালে কর্মব্যস্ত, সন্ধ্যায় নিথর দেহ

সোনালী ব্যাংক থেকে সদ্য অবসর নেন আহমেদ জাফর। ছবি: সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে গেছে মুখ। চেনার উপায় নেই। লাশ দেখে ফিরে আসেন এক স্বজন। চিনতে পারলেন না। আবার যান। ভালো করে দেখলেন। তখন হাত-পা আর শার্টের কলার দেখে চেনেন, এ লাশ তাঁর স্বজনের। নাম আহমদ জাফর।

দুই মাস আগে সোনালী ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর নেন আহমদ জাফর। ছিলেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এরপর তিনি চাকরি নেন আসিফ ইন্টারন্যাশনাল নামের কোম্পানিতে। এই কোম্পানির অফিস রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারের অষ্টম তলায়। প্রতিদিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অফিসে আসেন আহমেদ জাফর। এফ আর টাওয়ারের পাশেই তাঁর ভায়রা আবুল কালাম আজাদের অফিস। দুপুরে আগুন লাগার খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে আবুল কালাম ছুটে আসেন এফ আর টাওয়ারের সামনে। তিনি সেখান থেকে খবর দেন আহমেদ জাফরের ছেলে শোয়েব আহমেদকে। শোয়েব খবর পেয়ে আসেন বনানীতে। তাঁরা দুজন অপেক্ষা করেন এফ আর টাওয়ারের সামনে।

জাফরের ভায়রা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এফ আর টাওয়ারের সামনের রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। আহমেদ জাফর অফিসে এসেছেন সেই খবর তিনি জানতেন। কিন্তু এফ আর টাওয়ারের অষ্টম তলা যখন দাউ দাউ করে জ্বলছিল তখন নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল।

আহমেদ জাফরের ভাইপো আবদুল কাদের দুপুর দুইটার পর চাচার খোঁজ নিতে শুরু করেন। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রাজধানীর অসংখ্য হাসপাতালে খোঁজ করেন তিনি। কিন্তু চাচাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না কাদের। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহমেদ জাফরের সন্ধান পাওয়া যায়। হাসপাতালের মর্গে ছিল তাঁর নিথর দেহ।

জাফরের ভায়রা আবুল কালাম আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুর্মিটোলা হাসপাতালে অনেক লাশের মধ্যে প্রথমে চাচাকে খুঁজে পাইনি। তখন ফিরে যাচ্ছিলাম। পরে আবারও লাশগুলো দেখাতে যাই। তখন একটি লাশের হাত, পা ও শার্টের কলার দেখে চাচাকে খুঁজে পাই। কিন্তু মুখ এমনভাবে মুখ পোড়া ছিল যে, তাঁকে চেনাই যাচ্ছিল না। পরে রাত দুইটার পর আহমেদ জাফরের লাশ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ সকাল ১০টার দিকে জাফরের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জে।

বনানীর আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া জাফরের একমাত্র ছেলে শোয়েব আহমেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে ভাড়া থাকেন। আহমদ জাফরের ভায়রা বলেন, জাফরের সব স্বপ্ন ছিল তাঁর ছেলেকে ঘিরে।

জাফরের ভাইপো কাদের বলেন, ‘চাচার এমন মৃত্যু সহ্য করতে পারছি না। এটা একটি হত্যাকাণ্ড।’