Thank you for trying Sticky AMP!!

সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানোতে হয়রানি, ডাকঘরে ছদ্মবেশে অভিযান

দুর্নীতি প্রতিরোধ অভিযানের অংশ হিসেবে আটটি অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বুধবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব অভিযান চালানো হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২ জেলা প্রশাসক ও ৭ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংস্থার হটলাইনে (১০৬) অভিযোগ পেয়ে এসব অভিযান পরিচালিত হয়।

মুনাফাভিত্তিক পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানোর ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়া ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে ঢাকায় অভিযান চালিয়েছে দুদক । প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শারিকা ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা সদর প্রধান ডাকঘরে এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুদকের দলটি ছদ্মবেশে সেবা নিতে গিয়ে দেখে, সেখানে দায়িত্বরত দুই কর্মচারী তাঁদের সঙ্গে কথাই বলতে চাননি। 

অভিযানকালে দলটি দেখতে পায়, ডাকঘরের সিটিজেন চার্টারের বোর্ডটি নষ্ট হয়ে গেছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ জানানোর জন্য যে নম্বরটি আছে, তার শেষের দুটি ডিজিট দেখা যায় না। দুদক দলের পর্যবেক্ষণকে আমলে নিয়ে ডাকঘরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া দায়িত্বে অবহেলার জন্য অভিযুক্ত দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন মর্মে তিনি জানান।

সাধারণ বীমা করপোরেশনে বিমান বাংলাদেশের পুনর্বিমা করার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে এ অভিযান চালানো হয়। দুদকের দলটি সেখান থেকে অভিযোগসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। ওই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে দলটি।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মহিলা অধিদপ্তরের সেলাই প্রশিক্ষণে নানা অনিয়মের অভিযোগে সেখানে অভিযান চালায় সংস্থার ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। সহকারী পরিচালক কমলেশ মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি দল দুপুরে ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে প্রশিক্ষণকক্ষ ফাঁকা পান। প্রশিক্ষণসংশ্লিষ্ট নথি খতিয়ে দেখা যায়, সরকারি ছুটি ছিল এমন ২ দিনেও প্রশিক্ষণ হয়েছে মর্মে কাগজপত্র রয়েছে। এ ছাড়া একই ব্যক্তির নাম একই সময়ে পরিচালিত দুটি প্রশিক্ষণে রয়েছে, এমনটিও দেখা যায়। দুদকের দলটি ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পাওয়া অনিয়মের বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

দুদকের পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোজাম্মিল হোসেনের নেতৃত্বে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালিত হয়। দলটি সদর উপজেলার জৈনকাঠি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
দুদকের দলটি জেনেছে, ওই গ্রাম ও আশপাশে প্রায় দুই বছর আগে ১২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন টানা হলেও এখনো সংযোগ পাচ্ছেন না ৯৫০ জন গ্রাহক। গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক লাইন ডিজাইন করার সময়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক লাইন টানার সময় এবং ঘরে ঘরে লাইনের সংযোগ দেওয়ার আশ্বাসে দুই তিনটি স্তরে গ্রাহকপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সুপারিশ করে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে দুদকের দলটি।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় দেউলী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার অবৈধ অর্থ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় দুদক। অভিযোগ আসে, ওই ভূমি অফিসে খাজনা দেওয়ার সময় অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। সরেজমিনে অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদকের দলটি। উপস্থিত সেবাপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, বাড়তি টাকা না দিলে ওই ভূমি অফিসে খাজনা নেওয়া হয় না এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গত জুন থেকে আজ পর্যন্ত খাজনা বাবদ আদায় করা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করেননি, এমন প্রমাণও পায় দুদক দলটি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে অভিযান পরিচালনাকারী দল।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে করেছে দুদক। সরেজমিন অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক দল। দলটি দেখতে পায়, ওই কার্যালয়ের বেশ কিছু ওষুধে লেবেল নেই। এ ছাড়া কয়েকটি ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। কার্যালয়ের রেজিস্টারগুলোও হালনাগাদ অবস্থায় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানানো হলে তিনি এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবেন বলে দুদকের দলটিকে জানিয়েছেন।
দুদকের দলটি বিকেলে ভোলা লঞ্চঘাটে আরেকটি অভিযান চালায়। অভিযানে দেখা যায়, ঘাটে টার্মিনাল চার্জের তালিকাসংবলিত ব্যানার নেই। মালামাল নিয়ে ওঠার সময় যাত্রীদের কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালককে অনুরোধ করে দলটি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শীতলপুর চৌধুরীঘাটা ও কদমরসুল এলাকায় চারটি জাহাজভাঙা কারখানায় অভিযান চালায় দুদকের সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একটি দল। এ সময় সীতাকুণ্ডের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মাহবুবুল হক, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায়, পরিদর্শক পলাশ দাশ ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান পরিচালনা করা হয় চৌধুরীঘাটা এলাকার সাগরিকা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ও ম্যাক করপোরেশনে এবং কদমরসুল এলাকায় আরেফিন এন্টারপ্রাইজ ও এসএইচ স্টিল জাহাজভাঙা কারখানায়।
অভিযানে পরিবেশদূষণের দায়ে সাগরিকা জাহাজভাঙা কারখানাকে ১০ হাজার ও এসএইচ স্টিলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইনে (১০৬) অভিযোগ আসে সীতাকুণ্ডের কয়েকটি জাহাজভাঙা কারখানা সাগরে ব্যাপক হারে বর্জ্য ছেড়ে পরিবেশ দূষণ করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি তাঁরা আমলে নিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুটি কারখানায় দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ছিল সাগরিকা ও এসএইচ স্টিলে। তাই তাদের জরিমানা করা হয়। এসএইচ স্টিলকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামজারি, ডিসিআর ও খাজনা বাবদ ঘুষ নেওয়া ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনকে অবহিত করার জন্য গোপালগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।
বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ, বিদ্যুতের মিটার প্রদানে ঘুষ দাবির অভিযোগ, জমির খাজনার টাকা আদায়ের নামে ঘুষ দাবির অভিযোগ, জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চাল বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের অভিযোগ, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ক্লিনিকে অনুপস্থিত থেকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এবং স্কুলে ক্লাস না করিয়ে কোচিং-বাণিজ্যের অভিযোগে যথাক্রমে বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি), বকশিগঞ্জ (জামালপুর), চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম), চরফ্যাশন (ভোলা), ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল), হাতিয়া (নোয়াখালী) এবং যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে দুদক।