Thank you for trying Sticky AMP!!

সদলবলে প্রচারণায় এনামুল, হেনা একা

একাদশ সংসদ নির্বাচন

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ এনামুল হক তাঁর ওপর অভিমান করে থাকা নেতাদের মান ভাঙাতে পারলেও বিএনপির প্রার্থী আবু হেনা তা পারছেন না। সাংসদ এনামুল হক তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিত দলীয় নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও বিএনপির প্রার্থী তাঁর দলের বিরোধীদের ছাড়াই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ এনামুল হকের সঙ্গে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলামের বিরোধ দেখা দেয়। তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে দলের ওই অংশ সাংসদের বিরুদ্ধে এককাট্টা হন। তাঁরা সাংসদ এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সময় থেকেই সাংসদের সঙ্গে দলের ওই অংশটির বিরোধ চলে আসছিল। শুধু তা-ই না, এই বিরোধী অংশ থেকে তিনজন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি শেষ পর্যন্ত সাংসদ এনামুল হককেই মনোনয়ন দেয়।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরই সাংসদ তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতা-কর্মীদের মান ভাঙাতে ও কাছে টানার চেষ্টা করতে থাকেন। নিজের এই উদ্যোগের বিষয়ে সাংসদ বলেন, মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরই তাঁর পক্ষ থেকে বিরোধীদের মুঠোফোনে ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে সবাই মিলে একসঙ্গে নৌকার পক্ষে কাজ করারও আহ্বান জানানো হয় সাংসদের পক্ষ থেকে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর সাংসদ এনামুল হক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবনে আসেন। তখন সেখানে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়রও আসেন। এ ছাড়া তাঁদের অনুসারী উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীও সেখানে হাজির হন। এখানে সাংসদবিরোধীরা অভিমান ভুলে সাংসদ এনামুল হকের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন।
অপরদিকে সাংসদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী ১৮ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে সাংসদ এনামুল হককে নিমন্ত্রণ করেন। তিন শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে সাংসদ এনামুল চেয়ারম্যান আকবর আলীর বাড়িতে আসেন। এ সময় আকবর আলীর অনুসারীরা সাংসদকে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করার শপথ নেন। এ ছাড়া গত সোমবার রাতে শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা সাংসদকে নিজ এলাকায় আমন্ত্রণ জানান। ইউনিয়নের রামগুইয়া স্কুলমাঠে কর্মিসভার আয়োজন করে সেখানে সাংসদকে প্রধান অতিথি করেন চেয়ারম্যান। এ সময় সাংসদের অনুসারী ইউসুফ আলী ও বিপক্ষের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের মধ্যে কোলাকুলির ব্যবস্থা করে বিরোধের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেন সাংসদ নিজেই। পরে সাংসদ এনামুল হকের পক্ষে ভোট করার অঙ্গীকারসহ নিজের কর্মী, সমর্থকদের নৌকার পক্ষে কাজ করারও আহ্বান জানান চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধা।
এই প্রসঙ্গে সাংসদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভাপতি আকবর আলী বলেন, সাংসদের সঙ্গে তাঁদের ভুল-বোঝাবুঝি ছিল, যে মান-অভিমান ছিল, তা আর নেই।
সাংসদ এনামুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, সবাই নৌকার পক্ষে এককাট্টা হয়ে কাজ করছেন এবং নিয়মিত তাঁর সঙ্গে পরামর্শও করছেন।
অন্যদিকে বিএনপিতে ভিন্ন চিত্র। এখানে বিএনপির অভিমানী নেতাদের বাদ দিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থী আবু হেনা। এই আসনে বিএনপি থেকে ১১ জন মনোনয়ন চাইলেও আবু হেনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল গফুর। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আবু হেনাকে। এ ছাড়া আগে থেকেই এখানে বিএনপির দুটি শক্তিশালী পক্ষ রয়েছে। একটি হেনা পক্ষের এবং অপরটি গফুরের। তবে এখন পর্যন্ত আবদুল গফুর বা তাঁর অনুসারীরা আবু হেনার পক্ষে মাঠে নামেননি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মান ভাঙানো দূরের কথা, আমাকে ডাকাই হয়নি। তিনি (আবু হেনা) টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনে এনেছেন। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের ডাকার প্রয়োজন মনে করছেন না। ধানের শীষ প্রতীক পেলেই জিতে যাবেন, এমনই মনোভাব তাঁর।’
তবে আবু হেনার সমর্থক জেলা বিএনপির সহসভাপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের দমননীতি আর প্রশাসন দিয়ে হয়রানির মুখে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী মাঠে নামতে পারছেন না। এ অবস্থায় তাঁদের মাঠে না থাকাটাকে দলীয় বিরোধ বলা যাচ্ছে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।’