Thank you for trying Sticky AMP!!

সদালাপী ছিলেন সিজার তাবেলা

রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা সদালাপী হিসেবে পরিচিত ছিলেন সবার কাছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের ফুটপাতে সিজারকে (৫০) গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দুই তরুণকে গুলি চালিয়ে অপেক্ষমাণ এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে পালাতে দেখেছেন। তাঁর মরদেহ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের হিমঘরে রয়েছে।

সিজারের সহকর্মী ও গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ইতালির ক্যাশোলা ভালসেনিয়োর বাসিন্দা সিজারের বাবার নাম তাবেলা কোররাডো। তিনি ইতালির ভেটেরিনারি ফেকন্ডি অব বোলাঙ্গা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে ভেটেরিনারি মেডিসিন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। সিজার ইতালির ভাষা ছাড়াও ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি ভাষা জানতেন। তিনি ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সুদান, কোরিয়া, তিউনিসিয়াসহ ১২টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। সিজার সর্বশেষ ইতালিতে অক্সফামে কর্মরত ছিলেন। গত মে মাসে বাংলাদেশে এসে তিনি আইসিসিওতে যোগ দেন। সিজারের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে দুই বছর আগে। এরপর এক জার্মান বান্ধবীকে নিয়ে তিনি ইতালিতে থাকতেন। তাঁর ১৬ বছরের একটি মেয়ে আছে।

সিজারের মৃত্যুর খবরে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশান ২ নম্বরের ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান তাঁর সহকর্মী ও ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তারা। সেখানে আইসিসিও কো-অপারেশনের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক আলো রানি ঢালী বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিজার ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন সদালাপী, আন্তরিক ও হাসি-খুশি স্বভাবের।

সিজার গুলশান ২ নম্বরের ৫৪/৫১ সড়কের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী রাজন মিয়া বলেন, স্যার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় দেখা হলেই হাসিমুখে ‘গুড মর্নিং’ বলতেন। প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে তিনি কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতেন।

কর্মস্থল ছুটির পর সিজার প্রায় প্রতিদিন বারিধারার ৩ নম্বর সড়কে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে যেতেন সাঁতার কাটতে। সাঁতার শেষে তিনি জগিং করে বাসায় যেতেন। গতকাল বিকেলে ওই স্কুলে গেলে দুই নিরাপত্তাকর্মী ফোরকান ইসলাম ও মো. রসুল বলেন, সিজার ঢোকার সময় হাসিমুখে ‘গুড আফটারনুন’ বলতেন তাঁদের।

 পুলিশের গাফিলতি ছিল কি না, দেখতে কমিটি: ইতালির নাগরিক খুন হওয়ার সময় আশপাশে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের কর্তব্যে গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মো. দিদার আহম্মদকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সন্দেহভাজন ২০ ব্যক্তি চিহ্নিত: সিজার হত্যায় গুলশানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ভিডিও ফুটেজ দেখে তিন মোটরসাইকেল আরোহীসহ সন্দেহভাজন ২০ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে তাদের শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা।

মামলা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের কজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, সন্দেহভাজন ২০ ব্যক্তিকে শনাক্ত করার লক্ষ্যে তারা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাদের পরিচয় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। গুলশান ২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের ঘটনাস্থলটি পুলিশকে গতকাল ঘিরে রাখতে দেখা যায়।

এদিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘটনার সময় বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ থাকা নিয়ে তদন্তকারীদের সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তাঁরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনাস্থলের আশপাশে তিনটি বৈদ্যুতিক বাতি নেভানো ছিল। ঘটনার আট-দশ মিনিট পর তা জ্বলে ওঠে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ বাতির দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের সুইচ কাম ও ফিউজম্যান নাসিরুল কবির বলেন, ৯০ নম্বর সড়কসহ ৩৫টি বাতি একটি প্রধান সুইচের নিয়ন্ত্রণে। ঘটনার সময় তিনি প্রধান সুইচ ব্যবহার করে সব বাতি জ্বালিয়েছেন। তবে তিনটি বাতি নিভে থাকার বিষয়ে তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। ৮৪ নম্বর সড়কে প্রধান সুইচ বোর্ডের তালা নষ্ট ছিল এবং হত্যাকাণ্ডের পর আরেকটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নাসিরুল কবির বলেন, তিনি উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৩-এর উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল হালিমের কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর নতুন তালা কিনে লাগিয়েছেন। তবে গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সুইচ বোর্ডের দরজার একটি কড়া কাটা রয়েছে। ওই কাটা অংশ দিয়ে সহজেই তালা বের করে আনা যায়।