Thank you for trying Sticky AMP!!

সবুজের জন্য ঢাকাবাসীর লড়াই

ঢাকার রাস্তায় এক শিশু একাকী ফুটবল খেলছে। রাজধানীতে খেলার মাঠ ও পার্কের অভাবে তার মতো লাখো শিশু উন্মুক্ত জায়গায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১ জুলাই তোলা ছবিটি আজ প্রকাশ করা হয়। ছবি: এএফপি

ঢাকায় উন্নয়নের নামে শিশুদের একটি খেলার মাঠ দখল করে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ক্রীড়া সমিতি। এর পরই মাঠ রক্ষার আন্দোলনে নামে ঢাকাবাসী। শরিক হয় সর্বস্তরের মানুষ। সবারই চাওয়া একটাই—বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও দূষিত শহরটিতে টিকে থাকুক মুক্তস্থান, থাকুক সবুজের ছোঁয়া।
আজ সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে ঢাকার সবুজ স্থান হারিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে নগরবাসীর আন্দোলন-সংগ্রামের এই বিবরণ উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের ওই খেলার মাঠটি দখলমুক্ত করতে শত শত অভিভাবক, সাবেক জাতীয় ক্রীড়া তারকা ও পরিবেশবাদীরা দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। মাঠটি দখলমুক্ত করার দাবি জানান তাঁরা।
ওই আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপুও অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠটি ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি ক্লাব মাঠটি দখল করে। এটা জনগণের সম্পত্তি চুরি। আমরা এই প্রভাবশালী দখলদারদের ঠেকাতে পারছি না।’
মাঠ রক্ষার ওই আন্দোলন নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আন্দোলনের খবর ঢাকার পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রচার পায়। মুক্তস্থান ও খেলার মাঠ হারিয়ে যাওয়ায় ঢাকার লাখো শিশুর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার চিত্র গুরুত্ব পায়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দখলদারদের কারণে ঢাকার অবশিষ্ট মুক্তস্থান ও খেলার মাঠগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি হিসাব মতে, নানা কারণে ঢাকার দুই-তৃতীয়াংশ খেলার মাঠ এবং অন্যান্য পাবলিক স্থান বেহাত হয়েছে।
৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকায় আগে অনেক সবুজ, খেলার মাঠ, মুক্তস্থান ছিল। কিন্তু ঢাকা আর আগের মতো নেই। বাংলাদেশের রাজধানী এখন বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহর।
গত দুই দশকে ঢাকার জনসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে। প্রতি বর্গমাইলে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ বাস করে। সব মিলিয়ে ঢাকা এক অরাজক শহর।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) ইকবাল হাবিব জানান, ঢাকায় মাত্র ২৮টি খেলার মাঠ ও ৭০টি পার্ক টিকে আছে। সবগুলোর আকৃতিই ছোট। অধিকাংশ খেলার মাঠ ও পার্ক কোনো না-কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা দখলকৃত। অথচ মাত্র দুই দশক আগেও ঢাকায় শত শত মুক্ত জায়গা ছিল।

রাজধানীর এই জায়গায় একসময় খেলার মাঠ ছিল। এখন সেখানে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। ১ জুলাই তোলা ছবিটি আজ প্রকাশ করা হয়। ছবি: এএফপি

ঢাকার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে নাগরিক সমাজও যোগ দিয়েছে। তবে দখলদারদের প্রতিহত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় নাগরিক সমাজ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তাই ঢাকার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আন্তর্জাতিক গবেষণা ও জরিপে দেখা গেছে, বসবাসের জন্য ঢাকা বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহর। শহরের দূষণের মাত্রা ভয়াবহ। নগরায়ণ অপরিকল্পিত। সবুজ ও মুক্তস্থান হচ্ছে ধ্বংস।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, খেলার মাঠের অভাবে ঢাকার ছেলেমেয়েরা ভিডিও গেমসে ব্যস্ত সময় কাটায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলা ছাড়া বেড়ে ওঠা শিশুরা মারাত্মক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার মুখে পড়তে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুর রহমানের মতে, ঢাকার অনেক শিশু বিচ্ছিন্ন, আত্মকেন্দ্রিক ও ভঙ্গুর আবেগ নিয়ে বেড়ে উঠছে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে শিশুরা সামাজিক মিথষ্ক্রিয়া, সমস্যা সমাধানের উপায় ও নেতৃত্বের দক্ষতা শিখতে পারে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান ভূমি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদও স্বীকার করেন, ঢাকার অনেক মুক্তস্থান দখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে তাঁর দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আইনপ্রয়োগে লোকবলের অভাব রয়েছে। এ জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।