Thank you for trying Sticky AMP!!

সমঝোতার চেষ্টায় ছিলেন ওসি হেলাল!

হেলাল উদ্দিন, আব্দুল কাদের

পুলিশি নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আব্দুল কাদেরের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন খিলগাঁও থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন। দেওয়া হয়েছিল মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও। কিন্তু কাদের রাজি হননি।
আব্দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়ের আগের দিনও লক্ষ্মীপুরে আমার কর্মস্থলে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসি হেলালের কয়েকজন লোক। রায়ের দিনও প্রভাবশালীদের দিয়ে চাপ দেওয়া হতে পারে জেনে আমি আর আদালতে যাইনি। এ কারণে আপনারা আদালতে আমাকে দেখেননি।’
কাদেরকে নির্যাতনের ঘটনায় গত রোববার আদালত ওসি হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালত হেলালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ দেন।
২০১১ সালের ১৫ জুলাই রাতে ইস্কাটন গার্ডেনের খালার বাসা থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলে ফিরছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞানের ছাত্র আব্দুল কাদের। সেগুনবাগিচা এলাকায় গেলে তাঁকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাঁকে খিলগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন থানার ওসি হেলাল তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেন। তাঁর বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগ ও অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা করা হয়। মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া গাড়ি ছিনতাইয়ের মামলায়ও তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে আইনসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। তদন্তকালে ওসি হেলালসহ পুলি​শের তিনজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের নির্দেশও দেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয় ও পুলিশের তদন্ত কমিটি কাদেরকে নির্দোষ উল্লেখ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে ওসি হেলালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করা হয়। ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় ওসি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা আসত আমি সবাইকে বলে দিতাম, আমার ঘটনা নিয়ে অনেকেই সম্পৃক্ত। বিষয়টি এখন আমার একার না। আমি তো আর সমঝোতা করতে পারি না। আমি বলতাম, আমি ওই দিনের কষ্ট-যন্ত্রণা ভুলতে পারি না, ভুলতে পারব না। সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে আসা কেউ আমার কষ্টটা বুঝে চলে যেতেন, কেউ বা মন খারাপ করতেন।’

কাদেরের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছেন এমন একজনের সঙ্গে সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ওসি হেলালের পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা আছে। মানবিক বিবেচনায় তিনি কাদেরের কাছে গিয়েছিলেন। কাদেরকে চার-পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথাও তিনি বলেছিলেন। তবে কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে গতকাল ওসি হেলালের এক স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব বিষয় নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি ইঙ্গিত দেন ওসি হেলাল দেশেই আছেন। ‘ওনার সিদ্ধান্ত কী?’—প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্বজন বলেন, ‘রায় হওয়ার পর কেউ পালিয়ে যায়, কেউ বা আত্মগোপনে থাকে, আবার কেউ আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু আমাদের পরিবারের যে ব্যাকগ্রাউন্ড তাতে আমরা পালিয়ে কিংবা আত্মগোপনে থাকার মতো লোক নই। তাই তার আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে এসব বিষয় নিয়ে তাঁর (ওসি হেলাল) সঙ্গে কথা বলাও বিব্রতকর।’ ওই স্বজন আরও বলেন, ‘যদি সে (ওসি হেলাল) কাদেরকে নিজ হাতে আঘাত করে থাকে, তাহলে অবশ্যই অপরাধ করেছে। কিন্তু তার পরও এ রায়ের পর তাই আমরা কিছুটা বিপর্যস্ত, হতাশ।’ ওসি হেলালকে ​যে মোবাইল ফোন নম্বরে পাওয়া যাবে, তা তিনি দিতে রাজি হননি।