Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারি দপ্তরেই ছিল ১৬৯ মৃত্যুর তথ্য

ডেঙ্গু রোগীর তথ্যছকে পরিবর্তন এনেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল রোববার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য কিছুটা বিস্তারিতভাবে দিয়েছে অধিদপ্তর। ৩৩টি মৃত্যুর তথ্যে গরমিল ধরা পড়ায় অধিদপ্তর এখন ছক পাল্টেছে। ছকে দুটি নতুন স্তম্ভ যুক্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি দপ্তরেই ১৬৯টি মৃত্যুর তথ্য আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত সম্ভাব্য ডেঙ্গুতে ১৬৯টি মৃত্যুর ঘটনা জেনেছে। এর মধ্যে ৮০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করেছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি। কমিটি ৪৭টি মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু বলে নিশ্চিত করেছে।

গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, রোগীর রক্তের নমুনা, চিকিৎসা–সংক্রান্ত হাসপাতালের কাগজপত্র এবং মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়র ভাষ্যের ওপর ভিত্তি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পর্যালোচনা কমিটি। এই পর্যালোচনা চলতে থাকবে। তিনি জানান, ৫৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ১৬৯টি মৃত্যুর তথ্য তাঁরা পেয়েছেন।

মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি আইইডিসিআরের। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটির প্রধান। সংবাদ সম্মেলনের পর আইইডিসিআরের পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় আমরা মৃত্যুর সব তথ্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যানে ভুল ধরা পড়ার পর তথ্যছকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনার পরিসংখ্যানে গোঁজামিল ছিল।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তারা বলেছেন, আইইডিসিআর থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার পর কন্ট্রোল রুম তা প্রকাশ করে। এপ্রিলে ২টি, জুনে ৫টি, জুলাইয়ে ২৮টি ও আগস্টে ১২টি—এই মোট ৪৭টি মৃত্যুর তথ্য তারা প্রকাশ করেছে আইইডিসিআরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর। ৪৭টি মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ করার পর আইইডিসিআরের পরিচালক বলেছিলেন, ৮০টি মৃত্যুর ঘটনা তাঁরা পর্যালোচনা করেছেন।

>

মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন তথ্য। ৮০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুতে ৪৭টি মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।

২২, ২৩ ও ২৪ আগস্ট ডেঙ্গু রোগীর যে তথ্য হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪৭ জন মৃত ব্যক্তি, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর মিলিত সংখ্যা হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যার সমান। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন তোলেন, মৃত ৮০ জনের বাকি ৩৩ জনের তথ্য তা হলে কোথায়? গতকাল ১৬৯ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করার পর দেখা যাচ্ছে, ১২২ জনের মৃত্যুর তথ্য পরিষ্কার ছিল না।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার অধীনে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য পর্যালোচনা কমিটির মূল্যায়ন জরুরি।’ ছক পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘করণিক (ক্লারিক্যাল) কারণে হয়তো পরিসংখ্যানগত কিছু ভুল ছিল। সেটা দূর করার জন্য ছক পাল্টানো হয়েছে।’

এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথম আলো ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য সংকলন করে আসছে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সূত্র, আইইডিসিআরের সূত্র, সিভিল সার্জন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করছেন। হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সিভিল সার্জন ও মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করলে প্রথম আলো তা আমলে নিয়েছে। ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এভাবে ১৭২ জনের তথ্য প্রথম আলো পেয়েছে। গতকাল প্রথম আলো তা প্রকাশও করেছে। এই সংখ্যা সরকারের কাছে জমা হওয়া সংখ্যার চেয়ে তিনটি বেশি।

নতুন ছকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আইইডিসিআর ঢাকা শহরের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল থেকে ৫৯টি, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ৭৮টি ও আট বিভাগ থেকে ৩২টি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। সরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর তথ্য এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। এখানে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা হয়েছে। কমিটি ৩টি মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা স্কয়ার হাসপাতালে। এখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০। পর্যালোচনার পর ৯ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে কমিটি।

সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৪৭ জনের মধ্যে ১৮ জনের বা ৩৮ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। এদের মধ্যে ৭ জনের বয়স ৫ বছরের নিচে। বাকি ২৯ জনের মধ্যে ছিল ১২ জন নারী ও ১৭ জন পুরুষ। শিশু ১২ জন ও বয়স্ক ১৮ জনের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ছিল।