Thank you for trying Sticky AMP!!

সরকারের সিদ্ধান্তে তোয়াক্কা নেই বহু চালকের

ভাড়া বাড়ানোর পরও মিটারে যেতে চান না অনেক চালক

ঢাকা মহানগরে পয়লা নভেম্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ায় সরকার। ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সরকার জোরগলায় ঘোষণা দেয়, এখন থেকে ঢাকায় সব অটোরিকশা মিটারে চলবে। ওই দিন থেকে তারা কিছু ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করে। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর মাস না পেরোতেই অনেক চালকই তা মানছেন না।
সরজমিনে দেখা যায়, অটোরিকশাগুলো দিনে মোটামুটিভাবে মিটারে চলছে কিন্তু সন্ধ্যার পর যাত্রীদের যেতে হয় চুক্তিতে। এ ছাড়া দিনে স্বল্পদূরত্বে অনেক চালকই মিটারে চলতে রাজি হন না। আবার যাঁরাও মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় চলছেন, তাঁদের দাবি মিটারের চেয়ে ১০ বা ২০ টাকা বেশি।
প্রথম কয়েক দিন সঠিক নিয়মে মিটারে নির্ধারিত ভাড়া মেনে চললেও ধীরে ধীরে তা চালকেরা আর মানছেন না বলে অনেক যাত্রীর অভিযোগ। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে চালকেরা মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে রাজি হন। তবে তাতেও একটি ‘কিন্তু’ থাকে। অটোরিকশায় ওঠার আগে অথবা নামার সময় চালকের দাবি থাকে, ‘২০টা টাকা বাড়াইয়া দিয়েন।’ তবে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বেশির ভাগ চালক আর মিটারে যেতে রাজি হন না। তাঁদের দাবি, ‘মিটারে গেলে পোষায় না।’

দেখা গেছে, যেসব সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট বা চেকপোস্ট থাকে, ওই সড়কগুলোতে সিএনজি চালকেরা যাত্রী পরিবহনের সময় মিটারে যান। আর সন্ধ্যার পর সাধারণত ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকেন না। পুলিশ মামলাও করে কম। এ কারণে ওই সময়ে অনেক চালক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মিটারে যেতে চান না। পান্থপথ সিগন্যালে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট কে এম সবুর প্রথম আলোকে বলেন, বেশির ভাগ সময়ই যাত্রীরা অভিযোগ করেন না। কেননা তাঁদের ব্যস্ততা থাকে বা কোনো ঝামেলায় পড়তে চান না। এ কারণে চালকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে যেতে না চাওয়ার বিষয়ে যাত্রীদের যেকোনো অভিযোগে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে মিরপুর ১ নম্বর যাবেন মিরপুরের বাসিন্দা সালমান সাদেকীন। কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারের ভাড়ায় যেতে রাজি নয়। আবার চুক্তিতে ২০০ থেকে ২২০ টাকার কমেও কেউ যেতে রাজি হচ্ছেন না। চালকদের দাবি, ‘প্রাইভেটে’ নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশাগুলোতে মিটার না থাকায় চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছেন। তাই মিটারে চালকদের ক্ষতি হচ্ছে। সালমান সাদেকীন বলেন, এ সময় আশপাশে কোনো ট্রাফিক পুলিশও ছিল না যে অভিযোগ করা যাবে। আবার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অনেকবার ফোন করা হলেও কেউ সেটি ধরেননি।
সন্ধ্যার পর অটোরিকশার মিটারে না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন। তিনি বলেন, তাঁর নিজেরও এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাবুবাজার, গুলিস্তান, কমলাপুর ও সদরঘাটসহ কয়েক জায়গায় চালকদের একটি সিন্ডিকেট আছে। তাঁরা এ কাজটি করেন। যদি ওই সব এলাকায় সন্ধ্যার পর কয়েক দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায়, তাহলে তা কমবে। তিনি বলেন, ‘এখনো মিটারে যাওয়াটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি। এ ছাড়া চালকেরা যেন স্বল্পদূরত্বেও মিটারে যান, সে জন্য তাঁদের বারবার বলছি।’ সিএনজিচালকদের এই নেতা প্রাইভেটে নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলোর যাত্রী পরিবহন বন্ধ করার দাবিও জানান।
রাজধানী ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়ার হার ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তবে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরে অটোরিকশার নতুন ভাড়া কার্যকর হবে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে। নতুন ভাড়া অনুযায়ী অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) জন্য দুই টাকা। মালিকের জমা ৯০০ টাকা। ভাড়া বাড়ানোর পরও মিটারে যেতে চান না অনেক চালক।
ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা দুই বন্ধু রশিদুজ্জামান ও শামসুর রহমান অটোরিকশার মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াতের বিষয়টি জানতেন না। ফকিরাপুল থেকে মগবাজার যাওয়ার জন্য অটোরিকশা ঠিক করে ভাড়া কত জানতে চাইতেই, চালক বললেন, ‘মিটারে যাবেন।’ কিছুটা অবাক হয়ে দুজনই অটোরিকশায় চেপে বসলেন। গন্তব্যে পৌঁছে ভাড়া দিতে গেলে চালক বাড়তি ২০ টাকা দাবি করেন। এরপর থেকে ঢাকায় যতবারই অটোরিকশায় যাতায়াত করেছেন প্রতিবার চালক ১০ থেকে ২০ টাকা দাবি করেছেন। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে কারওয়ান বাজার থেকে বনানী যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আফরোজা আনসারীর। কারওয়ান বাজারে একটি অটোরিকশার চালক গন্তব্যে যেতে তাঁর কাছে মিটারের চেয়েও ২০ টাকা বেশি ভাড়া দাবি করেছেন। তিনি দিতে রাজি না হওয়ায় ওই চালক বনানী যেতে রাজি হননি। আফরোজা বলেন, ‘১০-২০ টাকা বেশি দেওয়া যায়। কিন্তু সেটা যেন নিয়মে পরিণত না হয়ে যায়।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অটোরিকশার নৈরাজ্যের শুরু এই বকশিশের হাত ধরেই। ২০০১ সাল থেকে তাঁরা বেপরোয়া হতে শুরু করে। প্রথমে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত আসে বকশিশ। তারপর বলে মিটারে যাব না, চুক্তিতে আসেন। এইবারও এ রকম চলতে থাকলে তেমন কিছুই হবে।
তবে অনেক যাত্রী আবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অটোরিকশার মিটারে যাওয়া নিয়ে। আকবর আলী নামে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যেভাবে মিটারে অটোরিকশাগুলো চলছে তাতে সুবিধা হচ্ছে যাতায়াতে। অনেক সময় তাঁরা চায়, বা নিজেরাই ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে দিই মিটার থেকে। তবে এই মিটারে যাওয়াটা যেন চালু থাকে। এ জন্য সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।’
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী বলেন, এই মুহূর্তে বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট শাখার ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন যাঁরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ ছাড়া বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিআরটিএতে ফোন করে বা অনলাইনে অটোরিকশার নিবন্ধন নম্বরসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। প্রাইভেট নিবন্ধিত অটোরিকশার যাত্রী পরিবহন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরাও শুনেছি এই অভিযোগটি। প্রাইভেট সিএনজি যাত্রী পরিবহন বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হতে পারবে না। তবে প্রাইভেট সিএনজিতে যাঁরা চড়েন, তাঁদের কে যাত্রী আর কে মালিক—সেটা নির্ণয় করাও কঠিন। সিএনজির নম্বর দিয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’