Thank you for trying Sticky AMP!!

সহানুভূতি জানাতে সেই নিতির বাসায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা

প্রতীকী ছবি

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নিতি আক্তারের দাদির সঙ্গে দেখা করে সহানুভূতি জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ওই বাড়িতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় নিতির লাশ। ঘরে পাওয়া চিরকুটে মা–বাবা ও নানা-নানির প্রতি তার অভিমানভরা কথা লেখা ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এটিকে অভিমানে আত্মহত্যার ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে।

গতকাল রোববার নিতির দাদি লাল বানুকে সহানুভূতি জানাতে আন্ধারুপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুবনা শারমিন।

এ সময় ইউএনও আরিফুর রহমান নিতির দাদির কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চান। কেন সামাজিক কবরস্থানে নিতিকে দাফন করা হলো না। কারও প্রতি কোনো অভিযোগ আছে কি না, জানতে চান। তখন দাদি লাল বানু কেঁদে বলেন, ‘আমার নাতনিই যখন বেঁচে নেই, তখন কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।’ নিতির বাবা আল আমিন তখন বাড়িতেই ছিলেন।

পরে ইউএনও আরিফুর রহমান নিতির দাদিকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আপনার খোঁজখবর নিতে এসেছি। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন।’ তবে ১১ বছরের শিশু নিতিকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন না করায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

গ্রামবাসী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিতি বেঁচে থাকতে মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। মৃত্যুর পর সমাজের কাছ থেকেও অবহেলা পেল। গত বুধবার রাতে প্রতিবেশীদের বাধার কারণে নিতিকে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দুরে বটতলা এলাকায় তার ফুপুর বাড়ির নির্জন বাঁশঝাড়ের নিচে দাফন করা হয়।

আন্দারুপাড়া ঈদগাহ ও সামাজিক কবরস্থানের সভাপতি মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে বিষয়টি জানালে এমনটা হতে দিতাম না।’

নিতির পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে আন্ধারুপাড়া গ্রামের আল আমিনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার ইয়াসমিন আক্তারের বিয়ে হয়। চার বছর পর তাঁদের সংসারে নিতির জন্ম হয়। ২০১৪ সালে আল আমিন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০১৫ সালে আল আমিনের সঙ্গে নিতির মা ইয়াসমিনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে নিতির মা ইয়াসমিন দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে রাজধানীতে চলে যান। অন্যদিকে নিতির বাবা আল আমিন দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে রাজধানীতে চলে যান। এ অবস্থায় মা–বাবার কাছে ঠাঁই না পেয়ে নিতি তার নানার বাড়িতে থাকতে চায়। কিন্তু নিতিকে তার নানা-নানি রাখতে অপরাগত প্রকাশ করলে নিতি আন্দারুপাড়া গ্রামে বৃদ্ধ দাদি লাল বানুর সঙ্গে থাকা শুরু করে। দাদি ছাড়া নিতিকে ভালোবাসার কেউ ছিল না। নিতির চিরকুটে সেসব অভিমানের কথাই লেখা ছিল।

মৃত্যুর পর মা–বাবা, নানা-নানি নিতিকে দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু তখন নিতি বাঁশঝাড়ের নিচে নির্জন কাঁচা মাটির ছোট্ট একটা কবরে শুয়ে ছিল।

ইউএনও আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিতির দাদিকে দেখতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। নিতির মৃত্যু সবাইকে কাঁদিয়েছে। ডিসি আনারকলি মাহবুব স্যারের নির্দেশে নিতির দাদির খোঁজখবর নিয়েছি। নিতির কবরটাও দেখে এসেছি। নিতির দাদির কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তবে তাঁর কোনো সমস্যা হলে উপজেলা প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে।’