Thank you for trying Sticky AMP!!

সাপপাখি, সাপকৌড়ি বা সাপগলা

সাপপাখি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ছবি: মারুফ রানা

পদ্মবনে বালিহাঁসের সাতটি ছানা চরে বেড়াচ্ছে। পদ্মপাতার ছাতার ছায়ায় ছায়ায় যেন হাঁটছে। অদূরেই চরছে মা-বাবাও; কিন্তু সতর্ক দৃষ্টি আকাশের দিকে। একটু বাদেই একটি মেছো ইগল আকাশ ফুঁড়ে নেমে আসতে লাগল। মা-বাবা দুবার সতর্কতাসংকেত দিয়ে ডুব দিল। সঙ্গে সঙ্গে ছানা সাতটি পদ্মবনে উধাও।

এদের পাশেই টুপটাপ ডুব দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত আরেকটি বড়সড় পাখি। সে–ও দিল ডুব। টলটলে জলের তলা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে সাবধানে একটা শুধু ঘাড়-মাথা ও চোখা-লম্বা ঠোঁটটি আকাশমুখী করে স্থির হয়ে রইল। হঠাৎ নজরে পড়লে যে কেউ সাপ ভেবে আঁতকে উঠতে পারে। জলচর এই পাখিটির নামও কিন্তু সাপপাখি। সাপকৌড়ি, সাপগলা ও গয়ার নামেও এরা পরিচিত।

সাপপাখি ৫০-৬০ বছর আগেও বাংলাদেশের বড় বড় বিল-ঝিল-হাওর-বাঁওড়ে সুলভ ছিল। এখন একেবারেই কোণঠাসা। টলটলে জলের তলা দিয়ে যখন এরা টর্পেডো গতিতে মাছকে ধাওয়া করে, তখন ঠোঁট-গলা-মাথা, শরীরসহ চওড়া লেজটি টানটান হয়ে সরলরেখার মতো হয়ে যায়। মনে হয় দুরন্ত গতির জলসাপ।  

এদের ঘাড়-গলা নলাকার। দৈর্ঘ্যে ৯০ সেন্টিমিটার। ওজন গড়পড়তা সোয়া কেজির মতো। লম্বা গলাটিকে এরা সাপের মতোই বিভিন্ন কোণে নিতে পারে।

সাপপাখির ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ডার্টার। বৈজ্ঞানিক নাম Anhinga melanogaster।এদের মূল খাদ্য মাছ। পানকৌড়ি-বক ইত্যাদি পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে বর্ষা থেকে শীতকাল পর্যন্তু গাছের ডালে শুকনো ডালপালা-লতা দিয়ে অগোছালো বাসা বাঁধে। তাতে মেয়ে পাখিটি ডিম পাড়ে ৫–৬টি। ডিম ফুটে ছানা হয় ২৪-২৬ দিনে।

পিঠ-ডানা-লেজের ওপরিভাগ ও ডানার প্রান্তসহ ডানার তলা কালো এদের। ডানার ওপরের প্রান্ত ও পিঠের দুই পাশের পালকের রং রুপালি-সাদা। ঠোঁট ও পায়ের রং ধূসরাভ-হলুদ। গলা সাদাটে।

জলের তলায় ডুব দিয়ে থাকতে পারে ৩০-৪০ মিনিট। ভেজা শরীর শুকাতে বা শীতে রোদ পোহানোর জন্য জলে পোঁতা খুঁটির মাথায় বা অন্য কোথাও বসে দুই পাখা ও চওড়া লেজটি এমনভাবে মেলে ধরে, যেন ধ্রুপদি কোনো ভাস্কর্য।