Thank you for trying Sticky AMP!!

সাড়ে ছয় মাসেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন

আনিসুল করিম

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ছয় মাস পার হলেও এখনো আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আদাবর থানা–পুলিশ। এর মধ্যে ১৩ জন কারাগারে আছেন। বাকি দুজন জামিনে মুক্ত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক ফারুক মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, এএসপি আনিসুল করিম হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অল্প সময়ের ব্যবধানে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এএসপি আনিসুল করিম হত্যাকাণ্ডে ১৫ জন জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। এর মধ্যে চার আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতকে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, আদাবরের মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকশন হাসপাতালের কোনো অনুমোদন ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছিলেন আসামিরা। মানসিক চিকিৎসা দিতে পারেন, এমন কোনো চিকিৎসকও হাসপাতালে ছিলেন না।

কীভাবে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে সেদিন হত্যা করা হয়, সে ব্যাপারে আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, ঘটনার দিন সকালে (৯ নভেম্বর) আনিসুলকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালটির চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকে চিকিৎসা না দিয়ে অনুমোদনহীন ভুঁইফোড় মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকশন হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য হাসপাতালটির বিপণন কর্মকর্তা আরিফ মাহমুদের সঙ্গে কথাও বলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে আনিসুলকে সিগারেট খাওয়ানোর কথা বলে মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকশন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান আসামিরা। তাঁকে বিশেষভাবে তৈরি অ্যাগ্রেসিভ রুমে ঢোকানো হয়। প্রথমে আনিসুলকে উপুড় করে শোয়ানো হয়। পরে তাঁর দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা হয়। এ সময় আসামিরা আনিসুল করিমের ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকে হাসপাতালের ছয় কর্মচারী মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। পরে আরও দুই কর্মচারী তাঁর পা চেপে ধরেন। তাঁর মাথার দিকে থাকা দুই কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাঁকে আঘাত করছিলেন। চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই তাঁর শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল হত্যাকাণ্ডে যে ১৫ জনের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের বিপণন কর্মকর্তা আরিফ মাহমুদ; হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির; বাবুর্চি মাসুদ খান; হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, আবদুল্লাহ আল মামুন, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহম্মেদ ও সাইফুল ইসলাম; ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান; চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন; হাসপাতালের মালিক ফাতিমা খাতুন; ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ ও নুসরাত ফারজানা। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন ও নুসরাত ফারজানা জামিনে মুক্ত। বাকি ১৩ আসামি কারাগারে আছেন।

এএসপি আনিসুল করিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়া চার আসামি হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা আরিফ মাহমুদ জয়, বাবুর্চি মাসুদ খান এবং ওয়ার্ড বয় সজীব চৌধুরী ও অসীম চন্দ্র পাল।
আনিসুলের বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নির্দোষ ছেলেকে যাঁরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, শিগগির আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।

আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি।