Thank you for trying Sticky AMP!!

সিংড়ায় সরগরম নির্বাচনের মাঠ

প্রচারণায় ব্যস্ত নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের দুই প্রার্থী। আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমেদ গতকাল হালদারপাড়া এলাকায় গণসংযোগের সময় কোলে তুলে নেন এক শিশুকে

এমন জোর কদমে হাঁটছেন, ছুটছেনই বলা যায়। পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি-কালো মুজিব কোট। গলায় মাফলার। পেছনে শ খানেক লোক। তরুণদের সংখ্যা ভারী। আছে একঝাঁক কচি-কাঁচা, মাঝেমধ্যে স্লোগান দিচ্ছে।
মেঠো পথ, জমির আল ধরে তিনি ঢুকে পড়ছেন এবাড়ি-ওবাড়ি। হাসিমুখে লম্বা সালাম দিচ্ছেন। বলছেন, ‘গতবার আপনাদের আশীর্বাদ পেয়েছি। এবারও এসেছি দোয়া চাইতে।’
তিনি জুনাইদ আহমেদ ওরফে পলক। গতবারের সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুনাইদ নৌকা মার্কা নিয়ে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান। মার্কা হাতুড়ি।
নাটোরের বাকি তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
কুয়াশায় আচ্ছন্ন শনিবার দুপুরে জুনাইদের সঙ্গে দেখা সিংড়ার তাজপুর ইউনিয়নের হরিপুরবাদ্যিকরপাড়ায়। আত্রাই নদের ওপর বাঁশের সেতু। মোটরসাইকেল থেকে নেমে সেতু পেরিয়ে গ্রামে ঢুকলেন তিনি।
সিংড়া উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন, ৫৫৬টি গ্রাম। ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজারের বেশি। ভোট চাইতে চাইতেই জুনাইদ কথা বলছিলেন আমাদের সঙ্গে। প্রতিদিন সকালে বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ। এদিন ছিল একাদশতম ইউনিয়নের গণসংযোগ।
এই নির্বাচনে সিংড়াকে মনে হলো ব্যতিক্রম। হইহই রইরই না থাকলেও, বেশ সরগরম পরিবেশ। মাইকে প্রচার চলছে। দেয়ালে পোস্টারও পড়েছে প্রচুর। লোকজনের মধ্যেও ভোটের আলোচনা আছে।
আয়-ব্যয়, সম্পদ: জুনাইদ আহমেদ গতবার হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন তাঁর বার্ষিক আয় এক লাখ ১৮ হাজার টাকা, ব্যয়ও তাই। এবারের হলফনামায় তিনি আয় দেখিয়েছেন ১৮ লাখ দুই হাজার ৭৫২ টাকা। স্ত্রীর সাত লাখ আট হাজার ৩০০ টাকা।

ওয়ার্কার্স পার্টির মিজানুর রহমান কুমগ্রাম বাজার এলাকায় প্রচারকালে বুকে জড়িয়ে ধরেন এক ভোটারকে । ছবি: প্রথম আলো

গতবারের হলফনামায় নিজের নগদ ৩০ হাজার, ব্যাংকে ২০ হাজার, সঞ্চয়পত্র ১৮ হাজার টাকার উল্লেখ ছিল। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, আসবাবপত্রসহ অস্থাবর সম্পদ ছিল দুই লাখ এক হাজার টাকার। স্থাবর সম্পত্তি ছিল ২০ হাজার টাকার ৩৩ শতক কৃষিজমি ও ৯০ হাজার টাকার ১৮ শতক অকৃষি জমি।
এবার নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে চার লাখ ৬১ হাজার ৪০৪ টাকা, শেয়ারবাজারে ছয় লাখ ৯৯ হাজার টাকা, ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, ২০ হাজার টাকার আসবাব, ৪১ তোলা সোনা। স্থাবর সম্পত্তি ২৪২ শতক কৃষিজমি, দোতলা পাকা বাড়ি, চারটি দোকানসহ চার শতক অকৃষি জমি।
স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে বেশি: গতবারের হলফনামায় স্ত্রীর নগদ ৫০ হাজার এবং ব্যাংকে ১০ হাজার টাকা ছিল। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, স্বর্ণালংকারসহ অস্থাবর সম্পদ ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার। ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতক অকৃষি জমি।
এবার নগদ ১০ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৩৮ লাখ ৮৭৩ টাকা, ভিশন বিল্ডার্স লিমিটেড কোম্পানির ৮০ শতাংশ শেয়ার, ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রাইভেট কার, ১০৩ তোলা সোনা। ৬ দশমিক ৬২ একর কৃষি ও এক একর অকৃষি জমি।
পাঁচ বছরে সাংসদ নিজে উপহার পেয়েছেন ৪১ তোলা সোনা, স্ত্রী উপহার পেয়েছেন ১০৩ তোলা সোনা। দুজনেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, এসি, ফ্রিজ উপহার পেয়েছেন একটি করে। দান পেয়েছেন এক একর অকৃষি জমিও।
গণসংযোগের মধ্যেই সম্পদ নিয়ে কথা হলো জুনাইদের সঙ্গে। সমর্থক ও কর্মী পরিবেষ্টিত তিনি বলেছেন, তিনি আইনজীবী, সে আয় আছে। সাংসদ হিসেবে মাসে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা সম্মানী পান। আছে আপ্যায়ন, ভ্রমণ ও অন্যান্য ভাতা। ইউএনডিপি, ইউএসএইডসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সেমিনার ও টিভি টকশো থেকে আয় আছে। অকৃষি জমিটি স্ত্রীকে দিয়েছেন তাঁর বাবা। গাড়ি কিনেছেন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে।
জুনাইদ জোর গলায় বললেন, ‘আমিই দেশের সবচেয়ে গরিব এমপি, এটা দাবি করতে পারি। তবে এটাও স্বীকার করি, আমি ফেরেস্তা না, আবার শয়তানও না। যেসব ভুল হয়েছে, তার জন্য আমি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষমা চাইছি। ভোটাররা ক্ষমা করবেন বলে আশা রাখি।’
‘ভুলটা কী ছিল?’ তিনি বললেন, ‘একটা বড় ভুল হয়েছে, সোনার নৌকা বা অলংকার উপহার নেওয়া। বহু জনসভায় ও অনুষ্ঠানে এলাকাবাসী এসব দিয়েছেন। পরে বুঝেছি এবং গত দুই বছর থেকে একটিও উপহার নেইনি।’
‘আশপাশে সবাই ভোট ছাড়া সাংসদ হয়ে যাচ্ছেন, আপনি হাড়কাঁপানো শীতে মাঠে-ঘাটে ঘুরছেন, খারাপ লাগছে?’ বললেন, ‘প্রথমটায় খারাপই লেগেছিল। মাঠে নেমে মনে হচ্ছে, এটি আমার জন্য বরং আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। যেটুকু ভুল-ভ্রান্তি ছিল, এর মধ্য দিয়ে তা শুধরে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’
তাজপুর থেকে আমরা যাত্রা করলাম সিংড়ার ৩ নম্বর ইউনিয়ন ইটালির দিকে। তবে যেতে ভিসা লাগে না! এখানে কুমগ্রামে মিজানুর রহমানও গণসংযোগ করছেন। পৌঁছে জানা গেল, তিনি চলে গেছেন কয়েক গ্রাম পরের বনকুড়ি গ্রামে। তাজপুর থেকে কুমগ্রাম হয়ে বনকুড়ি প্রায় ৩০ কিলোমিটার। দুপুরে বনকুড়ির একটি বাজারে পাওয়া গেল তাঁকে। তাঁর পরনেও সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি। গলার মাফলারটিও সফেদ। পায়ে পাম্প সু। লম্বা দোহারা চেহারা। জনা কুড়ি কর্মী সঙ্গে। ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, বুকে জড়িয়ে ধরছেন। এদিন তাঁরও ছিল একাদশতম ইউনিয়নে গণসংযোগ।
মিজানুর রহমান এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। কাজেই তাঁর সম্পদের তুলনা করার সুযোগ নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, কেউ কোনো ভয়ভীতি দেখাচ্ছে কি না—জানাতে চাইলে বললেন, ‘ভয়ভীতি তেমন কিছু নেই। তবে প্রধান বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় তেমন উত্তাপ নেই।’
ভোটাররা বললেন, হাড্ডাহাড্ডি লাড়াই হতে যাচ্ছে এই আসনে। উভয় প্রর্থীরই ধারণা, প্রায় ৬০ ভাগের মতো ভোট পড়বে। হরিপুরবাদ্যিকরপাড়ার ব্যবসায়ী তাপস সরকার বলছিলেন, যদি গন্ডোগোল না বাধে, তবে তিনি ভোট দিতে যাবেন। বনকুড়ির কৃষক সিদ্দিকুর রহমানও বললেন, অধিকার যখন আছে, তখন ভোট দিতে যাবেন বৈকি।