Thank you for trying Sticky AMP!!

সিরিয়ীরা কেউবা খাচ্ছে ঘাস

তিন বছরের গৃহযুদ্ধ জীবনযুদ্ধে প্রায় শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে অনেক সিরীয় নাগরিককে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনাহারে-অর্ধাহারে ধুঁকছে তারা। বাঁচার তাগিদে কেউ কেউ ঘাসও খাচ্ছে। কেউবা খাবার খুঁজছে আবর্জনার স্তূপে।
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার লক্ষাধিক লোক নিহত হয়েছে। বিরান হয়েছে বাড়িঘর। এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে খাদ্যাভাব দেশটিতে মানবিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দেশটির ইয়ারমুকের একটি শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে তা-ই জানিয়েছে আল জাজিরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাজধানী দামেস্কের কাছে ইয়ারমুকে ফিলিস্তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে শিশুদের মানবেতর অবস্থা ইউটিউবে দেখছিলেন আহমেদ ওদেহ। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছোট একটি মেয়ে ‘আমি ক্ষুধার্ত, আমি ক্ষুধার্ত’ বলে হাউমাউ করে কাঁদছিল।
ওদেহ ওই ভিডিওটি দেখে বলছিলেন, ‘এসব মানুষকে সহায়তা করতে প্রচারণা চালানোর একটা ধারণা পেয়ে যাই।’
ভিডিওটি দেখার পরই বেথলেহেমের দাইশে শরণার্থী ক্যাম্পের ফিলিস্তিনি বন্ধুদের নিয়ে ওদেহ দলবদ্ধ হলেন। বেথলেহেমের ওই বাসিন্দা ও তাঁর বন্ধুরা মিলে একটি পরিকল্পনা করলেন। সে অনুযায়ী তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন ইয়ারমুকে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা ‘লাইফ লাইন’ নামের একটি দল গঠনের।
ইয়ারমুক যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আর দশটা স্থানের মতো, যেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চলছে। সিরিয়ার এই গৃহযুদ্ধ ইতিমধ্যে তিন বছরে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ নিহত হলেও কোনো পক্ষই ক্ষান্ত হয়নি।
ইয়ারমুক ক্যাম্পে বসবাসরত আবদুল্লাহ আল-খতিব নামের একজন ফিলিস্তিন মানবাধিকারকর্মী জানান, ওই ক্যাম্পে না খেতে পেয়ে মারা গেছে ৫৫ জন লোক। আর ক্যাম্পের বেশির ভাগ শিশুই ভুগছে অপুষ্টিতে। তিনি বলেন, বাসিন্দাদের অধিকাংশই মসলাদার স্যুপ খাচ্ছে। বাঁচার তাগিদে অনেকে ঘাস খাচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
খতিব জানান, খাদ্যাভাব বন্ধে জাতিসংঘ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে রাস্তার পাশের যুদ্ধক্ষেত্র ও বিভিন্ন চৌকির পাশে বসবাসকারীদের জন্য খাদ্য সরবরাহ। কিন্তু তার পরও রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লার স্তূপের মধ্যে খাদ্য খুঁজছে অনেকে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই ওই ক্যাম্পে খাদ্য সাহায্য পৌঁছেনি। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লাইফ লাইন তাদের কার্যক্রম শুরু করে পশ্চিম তীর থেকে পূর্ব জেরুজালেম পর্যন্ত বিস্তার করেছে। ফেসবুকের যে পেইজ ব্যবহার করে তাঁরা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, সেটিতে এক লাখের বেশি সদস্য জোগাড় হয়েছে।
লাইফ লাইন ক্যাম্পেইনের অন্যতম উদ্যোক্তা রামি আবু হাদিদ জানান, ৩০০ থেকে ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবী তাঁদের সংগঠনের হয়ে ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইয়ারমুকে আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের জন্য পোশাক, খাদ্য ও অর্থ সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, এসব সাহায্য এখনো ওই ক্যাম্পে পাঠানো হয়নি। তবে সংগঠকেরা সিরিয়ায় নিযুক্ত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দূতের সঙ্গে এসব সাহায্য পাঠানো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাদিদ বলেন, ‘আমাদের বার্তা কেবল জিনিসপত্র পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, আমরা একটি মানবিক বার্তা পাঠাতে চাই যে, আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়িয়েছি...আমরা একই রকম মানুষ।’