Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটে এক হাটে তিন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতির আশঙ্কা

সিলেট শহরতলির লাক্কাতুরা চা-বাগানের ভেতর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আঙিনায় চলছে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো

একদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। মাঝখানে লাক্কাতুরা চা-বাগান। আর অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য যে স্থানটি বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটি লাক্কাতুরা সরকারি উচ্চবিদ্যায়ের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরের একটি স্থান। পশুর হাট বসলে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকা সত্ত্বেও জায়গাটি ইজারা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে সেখানে পশুর হাট বসানোর বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে।

সিলেট শহরতলির লাক্কাতুরা চা-বাগানটি সরকারি। ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) পরিচালিত এই চা-বাগানের গলফ ক্লাবের মাঠের পাশে টিলা এলাকায় সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু। কোরবানি পশুর হাট হিসেবে যে স্থানটি ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেটি প্রায় দুই একর জায়গার লাক্কাতুরা উচ্চবিদ্যালয় চত্বর। চতুর্দিক সীমানাবেষ্টিত।

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে ট্রাক রাখা। স্টেডিয়ামে যাওয়ার একমাত্র ফটক লাগোয়া স্থান থেকে কোরবানি পশু হাটে তোলা নিয়ন্ত্রণ করতে ইজারাদারের লোকেরা অবস্থান নিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের যে চত্বরে হাট বসানোর জন্য বাঁশ পোঁতা হচ্ছে, সেখানে পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এক কোটি বৃক্ষরোপণের জাতীয় কর্মসূচির গাছ লাগানো। পশুর হাটের জন্য স্থাপনায় সদ্য লাগানো গাছগুলো বিপন্ন হওয়ার মুখে পড়েছে। বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে লাক্কাতুরা চা-বাগনের গলফ মাঠ। ওই মাঠের চারদিকে রয়েছে চা-বাগান। বিদ্যালয় চত্বরের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে পশুর হাট সীমাবদ্ধ রাখা হবে বলে জানাানো হলেও চা-শ্রমিকদের আশঙ্কা গলফ মাঠের আশপাশের চা-গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

লাক্কাতুরা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আশরাফুল মতিন চৌধুরী জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ বৈঠকে বিদ্যালয় চত্বরে পশুর হাট বসালে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ বিষয়টি ২২ জুলাই লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এরপরও পশুর হাট বসানোয় এনটিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু পরিচালিত হয় সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে। বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেন্যু ব্যবস্থাক জয়দ্বীপ দাশ বলেন, শুক্রবার থেকে হাট বসানোর কাজ চললেও এ বিষয়ে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয়নি।

লাক্কাতুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম জহির জানান, তাঁরাও আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু কেউ শুনেনি। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে গাছগুলোর জন্য। এগুলো আমরা মুজিব বর্ষ উপলক্ষে লাগিয়েছিলাম ১৮ জুলাই। প্রধানমন্ত্রীর এক কোটি গাছ লাগানোর জাতীয় কর্মসূচির এই গাছগুলোর সুরক্ষা নিয়ে চিন্তায় আছি। পাশাপাাশি ফটকের ভেতরে পশুর হাট হলে বিদ্যালয় ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্র থেকে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ২১ লাখ টাকায় এ জায়গা ইজারা দেওয়া হয় সৈয়দ আতিকুল রব চৌধুরী নামের এক ব্যক্তিকে। স্থানটি অস্থায়ী পশুর হাট নির্ধারণ করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইজারা বন্দোবস্ত দিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি আশফাক আহমদ। সিলেট নগরীর অস্থায়ী পশুর হাটের ব্যবসার সঙ্গে যোগসূত্র রাখতে নগরীর উপকণ্ঠের এই স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও আশফাক আহমদ ফোন ধরেননি। তবে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া মমতাজ অস্থায়ী এই হাটের ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রক্রিয়াটি শেষ হয়েছে বলে জানান। ইউএনও বলেন, উপজেলা পরিষদ নিয়মিত সভা করে অস্থায়ী পশুর হাটের স্থান নির্ধারণ করে। এবার ওই স্থান বেছে নিয়ে পরিষদের সভায় চূড়ান্ত হয়। এরপর ইজারা প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তাঁদের কাছে আপত্তি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, সম্প্রতি সিটি করপোরেশন এমসি কলেজের কাছে পশুর হাট দিয়ে আবার বাতিল করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিবেচনায়। একই বিবেচনায় লাক্কাতুরা চা-বাগানের ভেতরে বিদ্যালয়ঘেঁষা স্থানটি কেন বাদ যাবে না? এমন তো নয়, সদর উপজেলা পরিষদের জায়গার অভাব।