Thank you for trying Sticky AMP!!

সুন্দরবনে সুন্দরী কমছে, গেওয়া বাড়ছে

খুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাংমারী এলাকাসংলগ্ন সুন্দরবন

উচ্চতা বেশি, ডালপালা কম। ফলে ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরীগাছ। আবার মাটিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। চারা টিকছে না বলে নতুন গাছও কম হচ্ছে। ফলে দিনে দিনে সুন্দরীগাছ কমছে সুন্দরবনে। ঠিক বিপরীত চরিত্র আর গঠনের কারণে এই বনে বাড়ছে গেওয়াগাছ। ফলে উপকূলে বনায়নের ক্ষেত্রে গেওয়াগাছকে গুরুত্ব দিতে বলছেন গবেষকেরা।

‘বাংলাদেশের সুন্দরবনে কেন কিছু গাছ ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?’ শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সুন্দরবনের সুন্দরী ও গেওয়াগাছের ঝড় সহ্য করার ক্ষমতা নিয়ে করা এই প্রতিবেদন গত সপ্তাহে ফরেস্ট ইকোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব সানশাইন কোস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও জার্মানির ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন গবেষক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।

সুন্দরবনে সুন্দরীগাছের যে বদল ঘটছে, তার বড় কারণ প্রাকৃতিক। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের ক্ষেত্রে ঝড়সহিষ্ণু জাত হিসেবে গেওয়াগাছ বেশি লাগাতে পারি।
নির্মল কুমার হালদার, গবেষক দলের প্রধান ও সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক

সুন্দরবনের বৃক্ষসম্পদ নিয়ে দেশে-বিদেশে করা গবেষণাগুলোতে সুন্দরীকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষ হিসেবে বলা হয়েছে। সুন্দরীগাছের পরিমাণ বেশি থাকায় এই বনের নাম সুন্দরবন হয়েছে বলেও জনশ্রুতি আছে। কিন্তু সিডর, আইলা, আম্পান ও ফণীর মতো ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরীগাছের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। মূলত ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাঠ জরিপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এই গবেষণায়।

এ গবেষক দলের প্রধান ছিলেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নির্মল কুমার হালদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনে সুন্দরীগাছের যে বদল ঘটছে, তার বড় কারণ প্রাকৃতিক। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা উপকূলীয় এলাকায় বনায়নের ক্ষেত্রে ঝড়সহিষ্ণু জাত হিসেবে গেওয়াগাছ বেশি লাগাতে পারি।’

গত বছরের আগস্টে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে দেশের বৃক্ষ ও বনজ সম্পদ নিয়ে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়। ট্রি অ্যান্ড ফরেস্ট রিসোর্সেস অব বাংলাদেশ নামের সেই প্রতিবেদনেও সুন্দরীগাছ কমে যাওয়ার চিত্র উঠে আসে। সেখানে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে সুন্দরীর চারা থেকে নতুন গাছ জন্মানোর পরিমাণ কমে আসছে। আর গেওয়ার চারা বেশি বেঁচে থাকছে ও গাছে পরিণত হচ্ছে। ফলে ধারাবাহিক সুন্দরবনে সুন্দরী কমে গেওয়া বাড়ছে।

সুন্দরবনের বৃক্ষসম্পদ নিয়ে দেশে-বিদেশে করা গবেষণাগুলোতে সুন্দরীকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষ হিসেবে বলা হয়েছে। সুন্দরীগাছের পরিমাণ বেশি থাকায় এই বনের নাম সুন্দরবন হয়েছে বলেও জনশ্রুতি আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল হোসেনের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের সবচেয়ে উঁচু ও দীর্ঘজীবী গাছ হচ্ছে সুন্দরী। দুই যুগ আগেও সুন্দরবনের ৭৬ শতাংশ এলাকাজুড়ে ছিল সুন্দরীগাছ, আর গত বছর তা ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। সুন্দরীগাছের উচ্চতা ছিল ২০ থেকে ২৫ মিটার। এখন তা ১২ থেকে ১৫ মিটারে নেমে এসেছে। এই ধারা চলতে থাকলে সুন্দরবনের গাছের সামগ্রিক উচ্চতা ও ঘনত্ব কমে আসবে।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, সুন্দরবনের একেকটি সুন্দরীগাছ অনুকূল পরিবেশ পেলে ৪০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচত। আর এটি মূলত মিঠা ও ঈষৎ লবণপানিতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে। কিন্তু উজান থেকে মিঠাপানির প্রবাহ কমে আসায় সুন্দরবনের সামগ্রিক লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। বিশেষ করে বনের সাতক্ষীরা ও খুলনা অংশে লবণাক্ততা বেশি বাড়ছে। ফলে সেখানে সুন্দরীগাছ কমে আসছে। আর বাগেরহাট অংশে লবণাক্ততা কম হারে বাড়ছে। সেখানে সুন্দরীগাছ কমার হার ধীর।

সর্বশেষ পাঁচ গবেষকের করা গবেষণাটির সমন্বয়কারী শরীফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বাড়ছে। তাই সামনের দিনগুলোতে জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় আমাদের উপকূলে বনায়ন করতে হবে। আর উপকূলে বনায়নের ক্ষেত্রে আমরা গেওয়াগাছকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারি।’