Thank you for trying Sticky AMP!!

সেই দুরন্ত জাগুয়ার দুটি

কোয়ারেন্টিন জোনে একান্ত সময় কাটছে জাগুয়ার দুটির। গত মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।

মঙ্গলবার ভরদুপুর। ক্যামেরা হাতে পায়চারি করছিলাম। সুনসান নীরব পরিবেশে হঠাৎ ভয়ংকর গর্জন। ভয়ে শরীরের লোম খাড়া হওয়ার দশা। তাকিয়ে দেখি সামনে জলজ্যান্ত এক জোড়া জাগুয়ার। চোখেমুখে আক্রমণের ভঙ্গি। বারবার থাবা মারার চেষ্টা।

এটি গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বন্য প্রাণী কোয়ারেন্টিন জোনের ভেতরের দৃশ্য। এ দেশে একমাত্র জাগুয়ার জোড়া বসবাস করছে সেখানে। খুব শক্ত কাঠামোর একটি ঘরে তাদের বসবাস প্রায় চার বছর ধরে। বাধ্যতামূলক বসবাস বলতে হবে। কারণ, এরা দুরন্ত ও ক্ষিপ্র প্রাণী। এদের বসতি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের বনে। বড় বড় গাছের মগডালে এক লাফে উঠে পড়ার ক্ষমতা আছে জাগুয়ারের। সাঁতার কাটায়ও আছে সমান দক্ষতা। নিজের খাবার শিকার করে খায়।

একদল চোরাকারবারির কবলে পড়ে পাচারের হাত থেকে বেঁচে গত ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের ঠাঁই হয় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কোয়ারেন্টিন জোনে। এভাবেই এক জোড়া জাগুয়ার হয়ে যায় বাংলাদেশের। এখন এই জাগুয়ার দুটিকে ঘিরে জেগেছে সম্ভাবনা।

সুখবর হলো, তারা এখন প্রাপ্তবয়স্ক। বাচ্চা জন্ম দিতে সক্ষম। এই জোড়া থেকে বাচ্চা পাওয়ার আশা আছে। পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান এই সুখবর দিলেন। জাগুয়ার জোড়ার ওপর দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণের পর তাঁর ধারণা কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। এই পরিবেশে জাগুয়ারের ঘরে শাবক জন্ম নিলে এটি হবে একটি চমকপ্রদ ঘটনা। তিনি জানিয়েছেন, জাগুয়ার দুটির ওপর তাঁদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে।

এদের থাকার জায়গা নিয়ে কথা হয় তবিবুর রহমানের সঙ্গে। স্বভাবজাত দুরন্তপনায় মেতে উঠতে হলে এদের জন্য উপযোগী পরিবেশ দরকার বলে মনে করেন তিনি। সেই অনুযায়ী একটি বড় ধরনের শেড তৈরির পরিকল্পনা আছে তাঁদের।

মঙ্গলবার পার্কের কোয়ারেন্টিন জোনে গিয়ে দেখা যায়, জাগুয়ার দুটি নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে ব্যস্ত। মানুষের উপস্থিতি দেখলে গর্জন করে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেষ্টনীর ভেতর একটি শুকনা গাছের ডাল দেওয়া আছে। জাগুয়ার দুটি কিছুক্ষণ পরপর সেই শুকনা ডালে লাফিয়ে ওঠে। আবার এক লাফে নেমে আসে। এভাবেই নিজেদের একান্ত সময় কাটছে তাদের। বিশেষ নিরাপত্তায় দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে নিযুক্ত লোকজন এদের খাবার ও পরিচর্যা নিশ্চিত করে।

লেপার্ড, জাগুয়ার ও চিতা—এই তিন‌ ধরনের বন্য প্রাণীকে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। শারীরিক গঠন ও রঙে অল্প কয়েকটা নিখুঁত পার্থক্য আছে এদের মধ্যে। এই তিন ধরনের প্রাণীর শরীরেই আছে ছোপ ছোপ কালো দাগ। তবে দাগগুলোর গঠনে আছে পার্থক্য। জাগুয়ারের ক্ষেত্রে গায়ের কমলা রঙের ওপর বিক্ষিপ্ত ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। এদের মাথাটা হয় বেশ বড়সড়।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন জার্নালে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী একেকটি পূর্ণবয়স্ক জাগুয়ারের ওজন ১১৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। জাগুয়ারের বসতি মূলত দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে। এরা বনের ভেতর নানা ধরনের ছোট প্রাণী শিকার করে খাদ্যের চাহিদা মেটায়। জাগুয়ার হলো বাঘ ও সিংহের পর তৃতীয় বৃহৎ বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। এরা পানিতে খুব ভালোভাবে সাঁতার কাটতে জানে। থাবা মেরে এরা পানিতে মাছ, কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীও শিকার করে। এ ছাড়া এদের খাদ্যতালিকায় আছে হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী। জাগুয়াররা দলবদ্ধ নয়, বরং এককভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে। এরা নির্দিষ্ট এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। জাগুয়ার সাধারণত একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। জন্মের সময় ভূমিষ্ঠ হওয়া বাচ্চাগুলো চোখে দেখে না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর এদের চোখ ফোটে। বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর জাগুয়াররা বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কঠোরভাবে।