Thank you for trying Sticky AMP!!

সুরমা তীরের 'বিলাসী শৌচাগার' উচ্ছেদ

সুরমা নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। গতকাল দুপুরে সিলেট নগরের কাজীরবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নিচতলায় শৌচাগার, দোতলায় বিশ্রামাগার। ছাদে ছিল ছাতার আদলে পাকা স্থাপনা। সিলেট নগরের কাজীরবাজার মৎস্য আড়তদার সমিতি নদীতীর দখল করে নির্মাণ করেছিল স্থাপনাটি। এলাকায় এটি পরিচিত ছিল ‘বিলাসী শৌচাগার’ হিসেবে। তিন বছরের মাথায় সেই অবৈধ স্থাপনার অবশিষ্ট অংশসহ সুরমাতীরের দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সমন্বয়ে সেখানে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান পরিচালিত হয়।

কাজীরবাজারের মাছবাজারে মৎস্য আড়তদার সমিতি নদীর তীরের চার শতক জায়গা দখল করে দোতলা পাকাঘরের ওপর একটি ছাতার আদল দিয়ে শৌচাগার নির্মাণ করেছিল। নিচতলায় আটটি শৌচাগার ও দোতলায় মৎস্য আড়তদার সমিতির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শৌচাগারের নির্মাণকাজ চলাকালে ২০১৬ সালের ২১ জুন প্রথম আলোয় ‘সুরমাতীরে বিলাসী শৌচাগার, বর্জ্য মিশছে নদীতে’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের একটি দল তখন সরেজমিনে ঘুরে জায়গা দখলের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে অবৈধ দখল গোটাতে কাজীরবাজার মৎস্য আড়তদার সমিতিকে নোটিশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ নদী কমিশন জেলা প্রশাসনকে অবৈধ শৌচাগার উচ্ছেদ করে নদীতীরের জায়গা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর চার মাসের মাথায় গত ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শৌচাগারের দোতলা পাকা অংশ ভেঙে ফেলে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নদীতীরের জায়গার মালিকানা সম্পর্কে কাজীরবাজার মৎস্য আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শৌচাগারটি নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, সমিতির নিজস্ব জায়গায়, সমিতির খরচে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ দাবির মুখে তখন পুরোপুরি উচ্ছেদ হয়নি শৌচাগারটি।

সিলেট নগরের কাজীরবাজার মৎস আড়তদার সমিতি নির্মিত সুরমাতীরে ‘বিলাসী শৌচাগার’। ২০১৬ সালের ২০ জুন তোলা ছবি। প্রথম আলো

কাজীরবাজারের বাসিন্দারা জানান, শৌচাগারটির দোতলা পাকা অংশ ভেঙে ফেলা হলেও সেটি ব্যবহার হচ্ছিল। জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পাউবোর সমন্বয়ে গতকাল দ্বিতীয় দিনের অভিযানে প্রথমে শৌচাগারের অবশিষ্ট কিছু অংশ ভাঙা হয়। এরপর সুরমা নদীর উত্তরপারের কিনব্রিজ থেকে কাজীরবাজার সেতু পর্যন্ত নদীতীরের দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় থাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়, নদী ও ভূমি আইন অনুযায়ী শুকনো মৌসুমে নদীর তলদেশ, বর্ষায় জলমগ্ন অবস্থা (ঢাল) আর নদীর তীর—এই তিনটি মিলে একটি নদীর সীমা। সবশেষে পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী, যেকোনো নদীবন্দর বা হাট এলাকায় নদীতীর থেকে ৫০ গজ জায়গা পর্যন্ত নদীর সীমা নির্ধারিত। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় ১০ মিটার পর্যন্ত নদীর সীমা ধরা হয়।

সুরমাতীর অবৈধ দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে এ বিধি অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে উচ্ছেদ অভিযান–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অভিযানের আগে অবৈধ
দখলদারদের জায়গা খালি করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তিন দিন আগে মাইকিংও করা হয়েছে। এতে দখলদারেরা সাড়া না দেওয়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেন তাঁরা। টানা দুই দিনের অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম খ্রিস্টফার হিমেল রিছিল। অভিযান শেষে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সুরমা নদীর তীর পুরোপুরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। দুই দিনের অভিযানে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।