Thank you for trying Sticky AMP!!

সেতুতে ইউপি সদস্য প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়, চলাচলে ভোগান্তি

ইউপি নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল (৪৭) সেতু দখল করে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। এতে চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ও বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতিষ চন্দ্র পালের (৪৭) বিরুদ্ধে চলাচলের সেতু দখল করে তাঁর ওপর স্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় নির্মাণ করে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সেতুর ওপর নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপনের ফলে ১০ দিন ধরে সেতুর ওপর দিয়ে রিকশা, ভ্যানসহ ক্ষুদ্র যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ক্ষিতিষ চন্দ্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। বিষয়টি স্থানীয় থানা-পুলিশ ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল ও মো. হোসেন আলী। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে সরকারি সেতু বন্ধ করে দিয়ে তার ওপর স্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছেন ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল।

বাদামতলা-পশ্চিম চন্দ্রহার সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ রিকশা, ভ্যানসহ ক্ষুদ্র যানবাহনে ইউনিয়ন সদর ও উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত করে থাকে। এই সড়কের ওপর নির্মিত সেতুতে তাঁবু টানিয়ে চেয়ার–টেবিল বসিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেন ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল। এলাকার লোকজন সেখানে নির্বাচনী কার্যালয় নির্মাণে নিষেধ করলে তা উপেক্ষা করেন ক্ষিতিষ চন্দ্র। বিষয়টি নিয়ে গৌরনদী মডেল থানা ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোটার বলেন, জনসাধারণের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়ে সেতুতে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন শুধু স্বেচ্ছাচারিতাই নয়, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাদামতলা-পশ্চিম চন্দ্রহার সড়কের পশ্চিম চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন ওই সেতুর ওপর ত্রিফলা টানিয়ে ঘর বানিয়ে নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেন ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল। নির্বাচনী পোস্টার সাঁটিয়ে সাজসজ্জা করে সাজানো হয়েছে কার্যালয়টি। বসানো হয়েছে অর্ধশত চেয়ার। সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন ক্ষিতিষ চন্দ্রের ফুটবল মার্কার ১০–১২ জন কর্মী–সমর্থক। ফলে ওই সড়কে যাতায়াতকারী অনেক নারী সেতু পার হতেই বিব্রত বোধ করেন। এ সময় কার্যালয়ে উপস্থিত লোকজনের কাছে জানতে চাইলে একাধিক কিশোর বলে, যদি আমাদের সামনে দিয়ে কেউ যেতে দ্বিধা–দ্বন্দ্ব করেন তাঁর এখান দিয়ে যাতায়াত করার দরকার নেই।

একাধিক নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘সেতুর ওপর নির্বাচনী কার্যালয়ে উঠতি বয়সী কিশোরেরা বসে থাকে। মেয়েরা সেখান দিয়ে গেলে তারা নানা উত্ত্যক্তমূলক কথা বলে।
প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্য প্রার্থী মো. হোসেন আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘সেতুর পূর্ব পাড়ে ভোটারদের সঙ্গে যাতে আমি গণসংযোগ করতে না পারি সে জন্য সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ওখান দিয়ে আমার কর্মীরা ভোটারদের সঙ্গে প্রচার–প্রচারণা চালাতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্ষিতিষ চন্দ্র পাল বলেন, বর্ষা মৌসুমে চারদিকে কাদা হওয়ায় ব্রিজের ওপর অস্থায়ীভাবে কার্যালয় স্থাপন করে কর্মীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে জনসাধারণের চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নারীদের চলাচল নিয়ে কিশোর কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই বা কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সেতু থেকে নির্বাচনী কার্যালয় অপসারণ করতে প্রার্থী ক্ষিতিষ চন্দ্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।