Thank you for trying Sticky AMP!!

সেতুর নিচের জায়গা কার?

বাবুবাজার সেতুর নিচের ছোট এই জায়গাটি পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এদিকে জায়গাটির মালিকানা দাবি করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর l ছবি: হাসান রাজা

পুরান ঢাকার বাবুবাজারে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুটির তত্ত্বাবধায়ক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর বা সওজ। কিন্তু সেতুর নিচের জায়গার মালিক কে?

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মধ্যে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এই সেতুর নিচের জায়গা পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ দিতে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ডিএসসিসি। অন্যদিকে সেতুর নিচের মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তাতে লেখা, ‘অধিদপ্তরের নিজস্ব সম্পত্তি, অবৈধ অনুপ্রবেশ নিষেধ’।

এদিকে সেতুর নিচের জায়গা উন্মুক্ত রাখতে ও দক্ষিণ অংশের (বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের দিকে) ছোট্ট খেলার মাঠটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন পুরান ঢাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের কাছে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুটি বাবুবাজার ব্রিজ নামে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরান ঢাকায় এমনিতেই উন্মুক্ত জায়গা, পার্ক বা খেলার মাঠ কম। এখন পার্কিংয়ের নামে এই মাঠটি ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করছে ডিএসসিসি। কিন্তু পুরান ঢাকার মানুষ তা হতে দেবে না।

সেতুর নিচে পার্কিং নিয়ে দ্বন্দ্ব

ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে রাজধানীর যানজট নিরসনে নগরীর ৫০টি স্থান পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারণ করে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর একটি হলো বাবুবাজার সেতুর নিচের অংশ। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়ার আগেই সেতুর জায়গা পার্কিংয়ের জন্য দখল করে নেয় একটি চক্র। তারা ইতিমধ্যে পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বুড়িগঙ্গা সেতুর বাবুবাজার অংশের নিচের জায়গা অবৈধভাবে ব্যবহার বন্ধ করতে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক উপবিভাগ-২। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল এহসান স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, সেতুর নিচের জমিতে কে বা কারা ডিএসসিসির মাধ্যমে দরপত্র নিয়ে গণশৌচাগার ও গাড়ি পার্কিং করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথচ এই সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার (কেপিআই) অন্তর্ভুক্ত। তাই সেতুর উপরিভাগ ও স্থলভাগ রক্ষণাবেক্ষণসহ সব মালিকানা শুধু সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের জন্য সংরক্ষিত।

জানতে চাইলে প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল এহসান প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর বিশেষ সুরক্ষা হিসেবে নিচের জায়গাও অধিগ্রহণ করা। আইন অনুযায়ী অন্য কোনো সংস্থা এই জায়গায় কোনো স্থাপনা তৈরি বা দখল করতে পারে না। সেতুর নিচের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে তাঁরা প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন।

এদিকে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো চিঠি এখনো তিনি হাতে পাননি। তা পেলে নিয়মমাফিক সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। তিনি বলেন, সেতুর নিচের এই জায়গাটিতে অবৈধ দোকানপাটে ভরা। বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও তা দখলমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। তাই পার্কিংয়ের জন্য জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। তবে এখনো তা কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।

খেলার মাঠ ও সেতুর নিচের চিত্র

সেতুর দুই থামের মাঝখানে ছোট একটি খেলার জায়গা। এর একটি থামের পুরোটায় বাংলাদেশের পতাকা আঁকা। ওপরে লেখা, ‘শিশু কিশোর যুবকদের খেলাধুলা ও এলাকাবাসীর জন্য মুক্ত স্থান’। এর এক পাশে লেখা ‘মোহামেডান’, অন্য পাশে ‘আবাহনী’। মাঠে খেলাধুলা করছে মহল্লার শিশু-কিশোরেরা। সেতুর নিচের বাকি অংশে অবৈধ দোকানপাট, ভ্যান, রিকশা, পিকআপে ভরা। দুটি জায়গায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ডিএসসিসির পার্কিংয়ের সাইনবোর্ড টাঙানো।

এই মাঠটি টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় সামাজিক আন্দোলন ও ডিএসসিসির মেয়র বরাবর আবেদন করেছেন জাকির হোসেন, যিনি বাবুবাজার বাদামতলী সমাজকল্যাণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মাঠটি উঠিয়ে দিতে অনেকবার চেষ্টা করেছে ডিএসসিসি। কিন্তু সবাই মিলে বাধা দেওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। মাঠ রক্ষায় মেয়রের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর নিচে মাঠের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে তা রক্ষা করতে হলে মহল্লার লোকজনকে আবেদন জানাতে হবে।