Thank you for trying Sticky AMP!!

সেশনজটে অধিকাংশ বিভাগ

>
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস নেন না
  • ২২ বিভাগে ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজট
  • সেশনজটে শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তাঁরা এখন সপ্তম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন। দেড় বছরের সেশনজটে রয়েছেন তাঁরা। একই অবস্থা এই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। তাঁরা এখন পঞ্চম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী তাঁদের এখন স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা।

শুধু নাট্যকলা বিভাগই নয়, এমন সেশনজটের কবলে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ৩৬টি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে অন্তত ২২টি বিভাগে ছয় মাস থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সেশনজট রয়েছে বলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন,  সেশনজট এখন অনেকটাই কমে এসেছে। যেসব বিভাগে সেশনজট রয়েছে, তাদের নিয়ে একাধিকবার মিটিং করা হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। সেশনজট কমাতে ডিসেম্বরের মধ্যে সব বিভাগকে পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।’

জানা গেছে, ইংরেজি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের অষ্টম ব্যাচে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস সবে শুরু হয়েছে। অথচ তাদের এক বছর আগেই স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার কথা। এই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দশম ব্যাচের সপ্তম সেমিস্টার চলছে, তাদের এখন অস্টম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষেই আছে এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট।

ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন পঞ্চম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁদের ষষ্ঠ সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এখন অষ্টম সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা এখনো ক্লাস করছেন। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখন ষষ্ঠ সেমিস্টার ক্লাস করছেন, যেখানে তাঁদের এখন এই সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই অবস্থা বাংলা, পরিসংখ্যান, চারুকলা, নৃবিজ্ঞান, ইতিহাস, উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাসি, অর্থনীতিসহ আরও কিছু বিভাগে। ফলে চার বছরের স্নাতক কোর্স সমাপ্ত করতে শিক্ষার্থীদের লাগছে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর। সেশনজটের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাঁদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং পরবর্তী সময়ে কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধিকাংশ শিক্ষকই রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। ফলে নিয়মানুযায়ী তাঁদের যে পরিমাণ ক্লাস নেওয়ার কথা, তার অর্ধেকেরও কম ক্লাস নেন। শুধু তা–ই নয়, সেমিস্টার পদ্ধতির নিয়মও তাঁরা যথাযথ অনুসরণ করেন না। অধিকাংশ শিক্ষকই তাঁদের ক্লাস এমনকি মিডটার্ম পরীক্ষাও নিজের ইচ্ছামতো বাতিল করে দেন। কেউ কেউ বিষয়টি আগের দিন রাতে ফেসবুকে অথবা ফোনে ক্লাস প্রতিনিধির (সিআর) মাধ্যমে জানিয়ে দেন। আবার শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ছাত্রদের এই বিষয়টি জানানোরও প্রয়োজন মনে করেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর জানায়, সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষকেরা ক্লাস রুটিন অনুসারে ক্লাস নেবেন। প্রতিটি কোর্সের প্রতি ক্রেডিটের জন্য ১৫ ঘণ্টা ক্লাস নেবেন। যেহেতু এক বছরে দুটি সেমিস্টার, সেহেতু জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই সেমিস্টার মিলিয়ে একটি সেশন শেষ হবে। এক সেমিস্টারের মেয়াদ ছয় মাস হওয়ায় পাঁচ মাসের মধ্যেই সমস্ত ক্লাস-অ্যাসাইনমেন্ট-মিডটার্ম এবং প্রেজেন্টেশন শেষ করে পরবর্তী ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই এর ফলাফল প্রকাশ করবেন। সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হলে পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করবেন। কিন্তু বেশির ভাগ বিভাগের শিক্ষকেরা এই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ২৪ থেকে ৩২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকেরা ফলাফল দিতে পারেন না, এমন অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষকেরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এমনও হয়, ক্লাস শুরুর নির্ধারিত তারিখ থেকে আরও প্রায় দুই মাস পরে গিয়ে কেউ কেউ ক্লাস শুরু করেন। যখনই দেখেন কোর্স শেষ করতে পারছেন না, তখন তাঁরা না পড়িয়েই বাড়তি অ্যাসাইনমেন্ট আমাদের ওপর চাপিয়ে দেন। ফলে পরীক্ষায়ও ভালো মার্কস আসে না।’

নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান কামালউদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের বিভাগের সেশনজটের কারণ হচ্ছে মাত্র দুজন শিক্ষক ছিলাম। মাস দুয়েক হলো পর্যাপ্ত শিক্ষক পেয়েছি। এখন আমরা সাতজন শিক্ষক। জানুয়ারি থেকে যে সেমিস্টারগুলো শুরু হবে, এগুলোয় আর জট থাকবে না।’

সেশনজটের ব্যাপারে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও সদস্য যাঁরা, তাঁরা যদি সচেতন না হন, চেয়ারম্যান হিসেবে কিছু করার থাকে না। আমি একাডেমিক মিটিংয়ে বারবার বিষয়টি জানাই। প্রশাসন থেকেও আরও চাপ থাকলে সেশনজট ঠিক হয়ে যেত।’