Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌদিপ্রবাসীদের এবার 'অন্য রকম' ঈদ

সৌদি আরবে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে এবার ঈদের আবহটাই অন্য রকম। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশের লোকজনের কাছে ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে পরের কয়েক দিন একেবারেই আলাদা। বাড়িতে-বাড়িতে দাওয়াত, রান্না করা খাবার নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে বন্ধু আর আপনজনদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া আড্ডা শেষে অনেক রাতে বাড়ি ফেরা। আর ঈদের পরের কয়েক দিনেও নানা রকম পুনর্মিলনী। এবার করোনায় বদলে দিয়েছে দীর্ঘদিনের সেই ছক।

অনেকটা চার দেয়ালের মধ্যেই এবার কাটবে সৌদি আরবের প্রবাসীদের ঈদ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে পবিত্র হজ আর ঈদুল আজহা হচ্ছে ভিন্ন আবহে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সৌদি আরবে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন এমন কয়েকজন পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন আবহে ঈদ উদ্যাপনের কথা জানা গেল।

ডা. শিরিনের ঈদ
প্রায় ২৩ বছর ধরে স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে রিয়াদে আছেন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শিরিন সুলতান। ফজরের নামাজের পরপরই সকালে পরিবারের সবাই মিলে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা চলে যেতেন কসাইখানায়। বাসায় মাংস আনার পর তা বিলির আয়োজন ও বাসায় রান্না করা, আনুষঙ্গিক কাজ সেরে কারও বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া, নিজের বাড়িতে অন্যদের আমন্ত্রণ জানানো, স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া—এ ছিল কোরবানির ঈদের নিয়মিত রুটিন।

শিরিন সুলতান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘ দুই যুগের ছকে বাঁধা ঈদ উদ্যাপনটা এবার পাল্টে দিয়েছে করোনা। ঈদের নামাজ কোথায় পড়া হবে এখনো জানি না। কারণ, রমজানের ঈদে ঈদগাহে নামাজ বন্ধ থাকলেও এবার তা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত কোথায় হবে, তা জানি না। এখনো একসঙ্গে এক পরিবারের পাঁচজনের বেশি সদস্য জড়ো হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা আছে। ফলে ঈদের সন্ধ্যায় দূরে গিয়ে আড্ডা আর খাওয়ার চর্চাটা এবার থাকছে না। ঈদের পরের সম্মিলনীও হবে না। সব মিলিয়ে এবার আমাদের ঈদটা একেবারেই আলাদা।’

হজের প্রসঙ্গে শিরিন সুলতান বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মুসল্লি হজ করতে আসেন। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার কোনো দেশ থেকে মুসল্লিরা হজ করতে আসেননি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার সৌদি ও বিদেশি নাগরিক এবারের হজব্রত পালন করছেন। হজব্রত পালনকারী মুসল্লিদের সহায়তায় পাঁচটি মেডিকেল টিম ও ২৮টি সেবাকেন্দ্র চালু রয়েছে।

রাষ্ট্রদূতের ঈদ
বাহরাইনে সম্প্রতি রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। মানামায় যাওয়ার আগে প্রায় পাঁচ বছর রিয়াদে বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। নজরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচবার ঈদ উদ্যাপনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশাজীবী, কর্মী—সবার কাছে ঈদ মানেই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি ঘোরাঘুরি ছিল একেবারেই ছকে বাঁধা। লোকজন ধর্মীয় আর পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে বন্ধু আর স্বজনদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন কোনো রিসোর্ট, খামারবাড়ি কিংবা কমিউনিটি সেন্টারে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা, গল্প আর খাওয়াদাওয়া সেরে লোকজন বাড়ি ফিরতেন। এবার এর কিছুই সেখানে হচ্ছে না।’

প্রকৌশলীর ঈদ
প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ২১ বছরের বেশি সময়জুড়ে সৌদি আরবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আছেন। তিনি সেখানকার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন। দাম্মামে বসবাসকারী এই প্রকৌশলী বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও নির্ধারিত কসাইখানায় গরু জবাই করা হবে। তবে আগের মতো লোকজনের সমাগম হবে না। আগে যেখানে শিশুসহ পরিবারের সবাই মিলে পশু কোরবানি দেখতে যেতেন, এবার তা আর হচ্ছে না। একটি পশুর জন্য যাবেন একজন ব্যক্তি। প্রতিবারই কোরবানির এক দিন আগেই পশু নেওয়া যেত কসাইখানায়। এবার সেটি হচ্ছে না। এবারের নিয়ম অনুযায়ী একটি পশু কোরবানি শেষ হলে পরের পশুটি নেওয়া হবে। সে অনুযায়ী আমি এখনো জানি না, আমার গরু কোন কসাইখানায় কোরবানির জন্য নেওয়া হবে। শুক্রবার যেহেতু ঈদ, আশা করা যায়, রাতের মধ্যে এটা আমাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

২০ বছরের বেশি সময় আগে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতে গিয়ে বেশ অবাক হয়েছিলেন বাংলাদেশের এই প্রকৌশলী ওয়াহিদুজ্জামান।